অভয়নগরে আট লাখ টাকা দিয়েও  জোটেনি স্কুলের আয়া   পদে চাকরি; জমি

অভয়নগরে আট লাখ টাকা দিয়েও জোটেনি স্কুলের আয়া পদে চাকরি; জমি

বিক্রি করে নিঃস্ব রেশমার পরিবার

মোঃ কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি :

অভিভাবক ও এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ; প্রতিবাদে মানববন্ধন

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়া পদে চাকরি পেতে শেষ সম্বল ৯ শতক জমি বিক্রি করে আট লাখ টাকা দিয়েও চাকরি জোটেনি অসহায়- দরিদ্র রেশমা বেগমের কপালে। স্কুলের সভাপতি- প্রধান শিক্ষকসহ কমিটির সকলে মিলে মসজিদে বসে চাকরি দেয়ার অঙ্গীকার করে টাকা নিয়েও চাকরি না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বিদ্যালয়ের অভিভাবক মহল ও স্থানীয় এলাকাবাসী। সেই সাথে ভূক্তভোগী পরিবারের অসহায়ত্ব নাড়া দিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহলকেও। ফলে তারা রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করে পূর্বের নিয়োগ বাতিলসহ রেশমা বেগমকে নিয়োগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এদিকে শেষ সম্বল ৯ শতক জমি হারিয়েও চাকরি না পেয়ে পাগল প্রায় রেশমা বেগম ও তার দিনমজুর স্বামী মাহাবুর রহমান। চাকরির পাওয়ার আশায় তারা দ্বারে দ্বারে কেঁদে ফিরছেন। সেই সাথে তিনটি শিশু সন্তান নিয়ে রাস্তায় নামার উপক্রম হয়েছে পরিবারটির। ঘটনাটি ঘটেছে অভয়নগর উপজেলার ১নং প্রেমবাগ ইউনিয়নের বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ভূক্তভোগী চাকরি প্রার্থী রেশমা বেগম ওই এলাকার মাহাবুর রহমানের স্ত্রী। গতকাল সোমবার বিকেলে বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এ ঘটনার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মানবন্ধনে বক্তারা উক্ত প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দূর্নীতি ও নিয়োগ বানিজ্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি অসহায় রেশমা বেগমকে আয়া পদে নিয়োগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। বিদ্যালয়ের অভিভাবকমহল, স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির একাংশের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে দুই শতাধিক লোক অংশ গ্রহন করে। মানববন্ধনে উপস্থিত ভুক্তভোগী রেশমা বেগমের দিনমজুর স্বামী হাবিবুর রহমান কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ আয়া পদে আমার স্ত্রী চাকরির আবেদন করার পর গত প্রায় এক মাস আগে প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোন করে তার বাড়িতে ডাকেন। সেখানে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষকসহ কমিটির সকলেই উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অফিস সহকারি ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে দুইজন নিয়োগ প্রার্থীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আমার স্ত্রীকে আয়া পদে নিয়োগ দিতে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন তারা। আমি অনেক অনুনয় বিনয় করে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে চাইলেও তারা রাজি হননি। পরবর্তীতে আট লাখ টাকায় তারা আমার স্ত্রীকে আয়া পদে নিয়োগ দিতে রাজি হয়। আমি এ সময় পূর্ব প্রস্তুতি অনুযায়ী স্ত্রীর সামান্য গহনা ও গোয়ালের দুইটি গাভী বিক্রি করা দেড় লাখ টাকা তাদের হাতে তুলে দিয়ে ১৫ দিনের সময় নেয়। এসময় আমার সামনে অপর দুই পদে এক একজনের সাথে নিয়োগ বাবদ ১২ লাখ টাকা করে চুক্তি করেন তারা। পরবর্তীতে ১৫ দিনের মধ্যে আমার শেষ সম্পদ ৯ শতক জমি বিক্রি করে তাদের বাকি সাড়ে ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। এদিন স্থানীয় কাটাখালি মসজিদের ভিতরে প্রধান শিক্ষক, সভাপতিসহ ৫ জনের উপস্থিতিতে টাকা প্রদান করি। তারা মসজিদে বসে অঙ্গীকার করেন আমার স্ত্রীকে আয়া পদে নিয়োগ দিবেন। এবং টাকা লেনদেনের সকল ঘটনা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করেই সম্পন্ন করি। কিন্তু তারা আমার স্ত্রীকে চাকরি না দিয়ে পার্শ্ববর্তী লিমা খাতুন নামের একজন মহিলাকে আয়া পদে নিয়োগ দিয়েছেন। জানতে পেরেছি, লিমার নিকট হতে ১০ লাখ টাকা পেয়ে তারা লিমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন জমি জমাসহ সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে আমি পথে বসেছি। আমার স্ত্রীর নিয়োগ না হলে পরিবার পরিজন নিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। এ সময় মাহাবুর রহমানের স্ত্রী রেশমা বেগম সাংবাদিকদের সামনে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, চাকরি না দিলে আমার শেষ সম্পদ জমি বিক্রি করালেন কেন? এখন তিনটি শিশু সন্তান নিয়ে কোথায় গিয়ে দাড়াবো? আমার মৃত্যু ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য হাফিজুর রহামান বলেন, মাহাবুরের পরিবারের প্রতি চরম অন্যায় করা হয়েছে। তাদেরকে পথে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। মসজিদে বসে অঙ্গীকার করে সেই অঙ্গিকার ভঙ্গ করে জঘন্য কাজ করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যে কারনে আমরা চারজন অভিভাবক সদস্য স্বাক্ষর না করে নিয়োগ বোর্ড থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হই। এ ব্যাপারে কথা বলতে বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলামের ব্যবহৃত ০১৯১০-৩৮৬৭৩৪ নম্বরে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিদ্যালয়ের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা কাশেম মোড়লের বক্তব্য নিতে তার ব্যবহৃত ০১৯৪২-০৮৫২৮৪ নম্বরে ফোন করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোনটি কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন করে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানানেই। সরকারি বিধিমালা অনুসরণ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কেউ গোপনে টাকা পয়সা লেনদেন করলে সেটা আমার জানার কথা না। এক প্রশ্নে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, একজন অভিভাবক সদস্য রেজাল্ট সিটে স্বাক্ষর না করে বেরিয়ে আসেন। অপর এক প্রশ্নে শহিদুল ইসলাম বলেন, অভয়নগরে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ কোন অভিযোগও কখনও করেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *