পরিবেশের বিপরীতে একা দাঁড়িয়ে কিভাবে নিজের ইচ্ছে ও স্বপ্নপূরণ করতে হয় তার জন্য আমাদের অনুপ্রেরণা হতে পারে হিরো আলমের জীবনী
তার টাকা-পয়সা, খ্যাতি, প্রভাব, শিক্ষা কিংবা রূপ—কিছুই ছিলো না। একটা নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম। ছোটবেলায় একবেলা খাবার খেতে পারলে দুইবেলা উপবাস থাকা লাগছে, বাবা চানাচুর বিক্রি করে সংসার চালাতো। সারাদিন হকারি করে রাতে ফিরেই স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করা ছিলো তার বাবার নিত্যদিনের কাজ।
ক্লাশ থ্রি বা ফোরে থাকা অবস্থায় এক বৃষ্টিস্নাত রাতে হিরো আলম ওরফে আশরাফুল আলমের মাকে মেরে ছেলেকেসহ ঘর থেকে বের করে দেয়। সে রাতে হিরো আলম মায়ের সাথে চলে আসেন নানার বাড়িতে। এখানেই তার শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে। তারপর ক্যাসেটের দোকান দিয়ে পরিবার চালিয়েছেন। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিলো অনেক বড়ো। বলতে গেলে আকাশকুসুম কল্পনা। সিনেমায় অভিনয় করা।
সে যত পরিচালকের কাছে ততজনই তাকে অপমান, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বিদায় করে দিছে। অথচ দেখেন সে দমিয়ে যায়নি, নিজের স্বপ্নপূরণ করতে কোনো কমতি রাখেনি। একটা বিরুদ্ধ পরিবেশে বিপরীতে একাই লড়াই করেছে। এবং বলা যায় সফলও হয়েছে। আজকে হয়ত আপনি তাকে ঘৃণা করতে পারেন, মূর্খ বলে গালাগালি করতে পারেন। করেন সমস্যা নাই, কিন্তু তার আগে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন—
আচ্ছা আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় এতো এতো ট্রল, হাসাহাসির শিকার হতেন, কখনো এভাবে টিকে থাকতে পারতেন, নাকি তার আগেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়তেন?
এতো এতো মানুষের কাছে তুচ্ছতাচ্ছিল্য, গালমন্দের শিকার হওয়ার পরও নিজের স্বপ্নপূরণ করতে এভাবে লড়াই করে যেতে পারতেন?
আমার মনে হয় না আপনারা কেউ উত্তর – হ্যা দেবেন। অথচ দেখেন হিরো আলম কিন্তু পেরেছে। আশরাফুল আলম থেকে নিজের নাৃ হিরো আলম বানাতে পেরেছে।
আজকে সে কোটি টাকার মালিক, এক সময় যাঁরা তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো তারাই আজকে তাকে ব্যবসার জন্য কাছে ডাকছে।
বন্যাসহ বিভিন্ন দূর্যোগে সে সাধ্যমতো মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা যাঁরা ফেসবুকে হাই-প্রোফাইল লেকচার দিই, তারা মানুষের জন্য কী করতে পেরেছি!
সে মাত্র ক্লাস থ্রি-ফোর পর্যন্ত পড়ে যে চমৎকারভাবে সাংবাদিকদের নানান কটাক্ষের জবাব দেয় তাতে তার কাছ থেকে শিক্ষিত সমাজের শেখার অনেক কিছু আছে। নিচে দুই-একটা নমুনা দিই—
একবার চ্যানেল টুয়েন্টিফোরে এক উপস্থাপক জিজ্ঞেস করেছিলো, আপনি এত প্রতিভার চাপ সামলান কী করে?
হিরো আলম খুব চমৎকারভাবে উত্তর দিছে, দেখেন আমি গান গাইতে পারি না, অভিনয় পারি না জানি। কিন্তু এরপরও আমি আমার মনের আনন্দের জন্য অভিনয় করতাম। আমি কয়েকটা সিনেমা বানিয়েছি। সেই সিনেমায় গানের জন্য যখন আমি বিভিন্ন গীতিকার, সুরকার, শিল্পীদের কাছে গান চাইলাম, তারা দিল না। তারা বলল, আমাকে গান দিলে তাদের মানসম্মান থাকবে না। তখন আমি বাধ্য হয়ে নিজে গাওয়া শুরু করলাম।
আমি গাইতে পারি না তাও জানি। আল্লাহতালা আমাকে গানের গলা দেননি। তাই বলে কি আমি আমার আনন্দের জন্য গাইতে পারব না?
কয়দিন আগে সাংবাদিক জিজ্ঞেস করছিলো, আপনার কী যোগ্যতা আছে আপনি এমপি নির্বাচন করার?
সে কী উত্তর দিয়েছে জানেন? শুনুন – দেখেন নায়িকা মাহিয়া মাহি চেষ্টা করল, ক্রিকেটার মাশরাফি নির্বাচন করল, মমতাজ নির্বাচন করল, তাদেরকে কখনো এই প্রশ্ন করেছেন, তাদের কী যোগ্যতা আছে এমপি ইলেকশন করার! তারা তো ক্রিকেট খেলেছে, কেউ অভিনয় করেছে, কেউ গান গাইছে। দেখেন আমার পড়ালেখা নাই কিন্তু আমার স্বপ্ন এবং ইচ্ছে আছে মানুষের জন্য কাজ করার। আমি আমার সাধ্যমতো মানুষের পাশে থেকে কাজ করার চেষ্টা করব।
কয়দিন আগে নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থীতা বাতিল করেছে, কিন্তু সে দমিয়ে যায়নি। লড়াই করে প্রার্থীতা ফিরে এনেছে এবং বগুড়া ৬ আসন উপ নির্বাচনে একতারা মার্কায় নির্বাচন করবেন।
আমি নিশ্চিত গায়ক মমতাজ কিংবা যে শিক্ষিত এমপি হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে, তাদের চাইতে হাজারগুনে হিরো আলম এমপি হওয়ার যোগ্য!
আপনি ঘৃণা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে পারেন, কিন্তু এই হিরো আলম থেকে আমি প্রতিনিয়ত শিখি। কিভাবে একটা বিরুদ্ধ পরিবেশে বিপরীতে একাই লড়াই চালিয়ে যেতো হয়, কিভাবে নিজের স্বপ্নপূরণে লেগে থাকতে হয়— সেটা Hero Alom -এর জীবনের দিকে তাকালে শেখা যাবে!
(বাংলা ভিশন এর নিউজ থেকে নেয়া।)