সত্যের খোঁজে আমরা
যা খুশি তাই করে আসছে শেখ হাসিনা। বিগত ১৫ বছরে হাসিনা যা করেছে তা লিখলে হাজার হাজার পৃষ্টা লিখতে হবে। এমন কোনো অপরাধ-অপকর্ম নেই যেটা হাসিনা করেনি। কিন্তু সব কিছুরই তো একটা শেষ থাকে। শেখ হাসিনাও একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাসিনাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। বলা যায়-হাসিনার শেষের শুরু হয়ে গেছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির এক তরফা নির্বাচনের পর থেকেই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী আচরণ, দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ধ্বংস, বিরোধী দলসহ মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া, সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ এবং গুম, খুন, অপহরণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল। কিন্তু স্বৈরাচারী হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের এসব উদ্বেগকে কোনো পাত্তাই দেয়নি। হাসিনা তার ফ্যাসিবাদী শাসন অব্যাহত রেখেছে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে ব্যাপক ভোটডাকাতির পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সরব হয়ে উঠে। উন্নয়নসহযোগী দেশগুলো শেখ হাসিনাকে সতর্ক করতে শুরু করে। কিন্তু হাসিনা এসবে কোনো কর্ণপাত করেনি। এর পরই যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে শেখ হাসিনার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
গত দুই বছরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন দুইটি গণতন্ত্র সম্মেলন করেছে। একটিতেও বাংলাদেশকে রাখেনি। বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে না রাখার মূল কারণ ছিল, বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নাই। দেশের মানুষ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। বিরোধী দলগুলো তাদের কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। সাংবাদিকরা শেখ হাসিনার দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে পত্রিকায় লিখতে পারেনি। সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখলে বা বলরেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে জেলে ভরা হয়।
তারপর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্ট এবং দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মানবাধিকার ল্ঘংনের চিত্র উঠে এসে। কথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে নিরপরাধ মানুষকে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যার সাথে জড়িত ছিল র্যাব। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব বন্ধ করার কথা বললেও শেখ হাসিনার জবাব ছিল-বাংলাদেশে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের তালিকাসহ বিস্তারিত তথ্য গিয়েছে।
এসব গুম-খুনের ঘটনার সঠিক তদন্ত করার জন্য শেখ হাসিনার প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বহুবার আহŸান করেছিল। কিন্তু হাসিনা কোনো সাড়া দেয়নি। এরপরই ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য শেখ হাসিনা বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
এরপর, এরপর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বহুদিন ধরেই শেখ হাসিনাকে তাগিদ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের পরামর্শ না শুনে শেখ হাসিনা তার বক্তৃতা বিবৃতিতে উল্টো যুক্তরাষ্ট্রকে নসিহত করেন। বিগত দুইটি নির্বাচন নিযে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি তুললে হাসিনা ও তার ছেলে জয় নোংরা ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রকে গালিগালাজ করেছে। এমনকি শেখ হাসিনা কথায় কথায় যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকিও দেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে। সহজভাবে বললে-এই ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করেছিলেন এই ভিসানীতি ঘোষণার পর হয়তো শেখ হাসিনা বিরোধী দলগুলোর সাথে গণতান্ত্রিক আচরণ শুরু করবে। অতীতে যা হবার হয়েছে আগামী নির্বাচনটা হয়তো অংশগ্রহণমূলক করার চেষ্টা করবে। কিন্তু ভিসানীতির পর দেখা গেল হাসিনা উল্টো সুরে গান গাইছে। হাসিনাসহ তার দলের নেতারা প্রায় প্রতিদিনই আমেরিকাকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। আমেরিকা না গেলেও নাকি তাদের কিছু হবে না।
শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাদের আচরণেই বলছে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিবে না। যেখানে ডিসি-ওসিরা নৌকার জন্য ভোট চাচ্ছে সেখানে সুষ্ঠু ভোটের প্রশ্নই উঠে না। যুক্তরাস্ট্র সব তথ্যই সংগ্রহ করেছে। এরপরই ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার ও আওয়ামী লীগের সাবেক বর্তমান অনেকেই ভিসানীতির মধ্যে পড়ে গেছে। বিচার বিভাগ, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন, সেনাবাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের লোকজনও ভিসানীতির আওতায় পড়েছে। এই ভিসানীতি ঘোষণার পর হাসিনা ও তার দলের নেতারা এখন চরম হতাশায় ভুগছেন।।
মজার বিষয় হল যে ভারত হাসিনাকে ১৫ বছর ধরে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহযোগিতা করে আসছে। সেই ভারতও এখন হাসিনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। জানা গেছে, ভারতকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ম্যানেজ করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে হাসিনা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বাইরে যাচ্ছে না ভারত।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। হাসিনার যাওয়ার এখন রাস্তা বন্ধ। ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া ছাড়া হাসিনার সামনে আর বিকল্প কোনো পথ নেই।