উপকূলেই আমার বসবাস,   উপকূলকে আমি

উপকূলেই আমার বসবাস, উপকূলকে আমি

ভালো করে জানি। আমরা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে হিমেল বাতাসে গা ভাসাতে এই নদীর কুলেই যাই, কিন্তু এই নদীই যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা উপকূলর এই বেড়িবাঁধে বসবাস করা মানুষ গুলোই জানে।

জনশুমারীর কাজ করতে মেঘনার পারে গিয়ে এক অসহায় মায়ের কন্ঠে তার গল্প শোনা।
নাম বিবি মরিয়ম বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই মেঘনা নদীর বেড়িবাঁধে বাহিরে ছোট্ট একটা নড়বড়ে ঘরে বসবাস একটি মেয়ে আছে বিয়ে দিয়েছে সেই মেয়েকে নিয়ে ঐ ছোট্ট ঘরটি থাকেন তিনি। স্বামী নেই রাস্তার কাজ করে যা পায় তা দিয়েই কোনোভাবে সংসার চালান এতো কষ্টের মাঝেও তার অন্য কোনো চিন্তা মাথায় নেই। চিন্তা শুধু একটাই যখন বর্ষকাল আসে নদী আর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি কখন যেনো এই ঐ শান্ত নদী অশান্ত হয়ে যার আর তার ভয়ংকর ঢেউ এসে মা মেয়ের মাথা গুঁজানোর ঘরটা স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

ঝড়ের সময় যখন সবাই ছুটে আসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমরা তখন চোখ মুখে অন্ধকার দেখি,দেখি ঐ মেঘনার ভয়ংকর রূপ। থাকবেতো অামার মা মেয়ের মাথা গুঁজানোর ছোট্ট ঘরটি নাকি মেঘনার ভয়ংকর থাবায় কেড়ে নিয়ে যাবে।

বর্ষা আসলেই অতিরিক্ত জোয়ারে ঘরে পানি ঢেউ খেলে চুলায় আগুন জ্বলেনা ঢেউ এসে ঘরের মাটি গুলো ধুয়ে নিয়ে যায় ভয়ে বেড়িবাঁধের উপরে দাড়িয়ে থাকি বৃষ্টিতে ভিজে কাঁধে করে বালুর বস্তা দিয়ে ঘরের মাটি গুলো আটকানো বৃথা চেষ্টা করি। তারপরও যেনো মাথা গুঁজানোর ঘরটা রক্ষা পায়।

বর্ষায় রাতের অন্ধকারে ঝড় আসলে নদীর বড় বড় ঢেউ এসে আঁচড়ে পরে শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ঘর থেকে বের হয়ে নদীর প্রানে তাকিয়ে থাকি কি ভয়ংকর ঢেউ কি হবে জানা নেই কতবার এই ভঙেছে আর কতবার টেনে টেনে তুলেছি হিসাব নেই। অন্য কোথাও আর জায়গা নেই মাথা গুঁজার ঠাই নেই যতদিন বাঁচি এই মেঘনার ভয়ংকর রূপ দেখেই বেঁচে থাকতে হবে।

প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করেই এই মানুষ গুলোর বসবাস যেকোনো সময়ই হতে পারে ভিটেমাটিহীন। তাদের গল্প শোনে মনে পরলো সেই কথাটি, দুঃখ যাদের জীবন গেঁড়া তাদের আবার দুঃখ কি?

মোঃ মাহাবুব আলম আপন

স্থান মেঘনা নদীর পার বেড়িবাঁধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *