গাউসুল আযম হযরত সৈয়দ আহমদউল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (রহঃ) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

গাউসুল আযম হযরত সৈয়দ আহমদউল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (রহঃ) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

ইসলামের হাজার বছরের ইতিহাসে, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের পথ হিসেবে এবং ইসলামের আলোকে মানুষের জীবন যাপনের জন্য অনেক প্রসিদ্ধ তরিকা প্রবর্তিত হয়েছে। তারই মধ্যে একটি বিখ্যাত তরিকা ‘তরিকা-এ-মাইজভাণ্ডারীয়া’। এটিই বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে প্রবর্তিত একমাত্র তরিকা। গাউসুল আযম হযরত শাহ্সুফি সাইয়্যিদ আহমদউল্লাহ্ আল হাসানী (রহঃ) ১৯ শতকে এ তরিকা প্রবর্তন করেন।

গাউসুল আযম হযরত শাহ্সুফি সাইয়্যিদ আহমদউল্লাহ্ আল হাসানী (রহঃ) ১৮২৬ সালে, ১২৩৩ বঙ্গাব্দের ১লা মাঘ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ‘মাইজভাণ্ডার’ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি মাইজভাণ্ডার নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করায়, তার নামের সাথে ও তার প্রবর্তিত তরিকার সাথে ‘মাইজভাণ্ডারী’ নামটি যুক্ত হয়েছে।

তিনি অত্যন্ত সভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তিনি প্রিয় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশধারায় ২৭তম পুরুষ। তার পিতার নাম হযরত সৈয়দ মতিউল্লাহ্ (রহঃ) এবং মাতার নাম হযরত বিবি খায়রুন্নেসা (রহঃ)।

ফটিকছড়ির একটি স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন শেষে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এ মাদ্রাসাটি বর্তমানে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এ রূপান্তরিত হয়েছে।

প্রতি বছরই তিনি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করতেন এবং মাসিক ৫০ রূপি বৃত্তি লাভ করতেন। ১৮৫১ সালে তিনি এ মাদ্রাসা থেকে কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরপর তিনি অবিভক্ত বাংলার যশোর জেলায়, সম্মানিত বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। বিচারককে তখন ‘কাজি’ বলা হত।

১৯৫৩ সালে তিনি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক এ বিচারকের পদ ছেড়ে কলকাতার ‘মুন্সী বু আলি কলন্দর মাদ্রাসা’ এর হেড মুদাররিস পদে যোগদান করেন। এর কিছুদিন পরে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল পদে যোগদান করেন।

গাউসুল আযম হযরত সৈয়দ আহমদউল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (রহঃ) যখন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত, তখন তৎকালীন সময়ের মহৎ একজন সুফি সাধক হযরত আবু শাহমা মুহাম্মদ সালেহ্ লাহোরী (রহঃ) এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। তিনি হযরত আবু শাহমা মুহাম্মদ সালেহ্ লাহোরী (রহঃ) এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে তিনি আওলাদ-এ-রাসুল (দরুদ) হযরত সৈয়দ দেলোয়ার আলি পাকবাজ (রহঃ) এর সান্নিধ্যে গিয়ে আধ্যাত্নিক সাধনায় মনোনিবেশ করেন। ৫ বছর তিনি তার মুর্শিদের সেবায় নিয়োজিত থেকে এক পর্যায়ে তিনি কঠোর সাধনা ও ইবাদাতের জন্য শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৮৫৮ সালে তিনি মাইজভাণ্ডার গ্রামে তার বাড়িতে ফিরে আসেন।

তার মায়ের একান্ত আগ্রহে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন এবং মাইজভাণ্ডার গ্রাম থেকেই তরিকা-এ-মাইজভাণ্ডারীয়ার প্রচার প্রসার শুরু করেন।

মাইজভাণ্ডারী তরিকায় মহান আল্লাহ্ ও প্রিয় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি গভীর ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সৃষ্টির সেবার মাধ্যমে স্রষ্টার সান্নিধ্য অর্জনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আত্নিক পরিশুদ্ধির জন্য এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য এ তরিকার নিয়ম নীতি বিশ্বজুড়ে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করছে। এ তরিকা এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, খুব অল্প সময়ে এ তরিকা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং কোটি কোটি মাইজভাণ্ডারী ভক্ত অনুরাগীর সৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষত গাউসুল আযম হযরত সৈয়দ আহমদউল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (রহঃ) এর ভ্রাতুষ্পুত্র গাউসুল আযম হযরত সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভাণ্ডারী (রহঃ) এর মাধ্যমে এ তরিকা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়। পরবর্তীতে হযরত সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভাণ্ডারী (রহঃ) এর পৌত্র হযরত শাহ্সুফি সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী (রঃ) জাতিসংঘ, ইউনেস্কোসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্লাটফর্মে এ তরিকার সাম্য, মানবতা, ভাতৃত্বের দর্শন তুলে ধরার মাধ্যমে এ তরিকাকে বিশ্বের দরবারে আরো সুপরিচিত করে তোলেন।

মাইজভাণ্ডার শরীফের মহাত্মাগণের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এমনকি গহীন অরণ্যে, দুর্গম পাহাড়ী জনপদেও তারা ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *