গুলি করলেও নিজামকে পায়নি পুলিশ, নারাজী দিবেন আইভী
নিজস্ব সংবাদদাতা // নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার
ইস্যুতে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে লক্ষ্য করে গুলি ও হামলার ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে দায়েরকৃত মামলার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আইভীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র আইভী জানিয়েছেন তিনি এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে না রাজী দিবেন।
৭ জানুয়ারী বিশেষ বাশী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আইভী বিষয়টি তুলে ধরেন। বলেন, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারির কথা মনে আছে হয়তো নারায়ণগঞ্জবাসীর। হকার উঠানোকে কেন্দ্র করে আমার উপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। আমাকে গুলিও করা হয়েছিল। আমাকে মানবঢাল করে বাঁচানো হয়েছিল। পুলিশ রিপোর্ট দিয়েছে শাহ নিজামের অস্ত্র দেখেছে। কিন্তু অস্ত্রটির লাইসেন্স থাকায় আপাতত ওনাকে পাওয়া গেলো না বিধায় তাকে ওনার সাক্ষাৎকার নেওয়া গেল না বিধায় অস্ত্রমামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়। তিনদিন আগে ওই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। দুই বছর ঘুরেছি মামলা নেওয়া হয়নি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটি হয়েছে। এখন আমরা না রাজী দিব।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী সেই ঘটনার পর সদর মডেল থানায় অভিযোগ দিয়ে মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে আদালতে দায়ের করা অভিযোগে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে ওই কড়া তর্জনী তুলে ধরা হয়। এতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পক্ষে পুরো ঘটনার পেছনে শামীম ওসমানকেই পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে দায়ী করা হয়। সেই সঙ্গে এও অভিযোগ করা হয় শামীম ওসমানের কারণেই একদল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর উপর হামলা সহ হত্যার চেষ্টা করে। ২২ মাস ১৮ দিন পর ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতের নির্দেশে সদর মডেল থানায় দেয়া অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। এতে অভিযোগ করা এমপি শামীম ওসমানের ইন্ধনে ও প্রচারণাতেই মেয়র আইভীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে এবং তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
মামলায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হলেন অস্ত্র প্রদর্শনকারী নিয়াজুল ইসলাম খান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, নগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগকর্মী নাসির উদ্দিন, যুবলীগ নেতা চঞ্চল মাহমুদ।
মামলার আবেদনে বলা হয়, বিবাদীরা মামলার সাক্ষীপ্রমাণ বিনষ্ট ও গায়েব করার পরিকল্পনা করছে। বিবাদীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে গ্রেপ্তার করার আর্জি করা হয়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিবাদীরা সকলেই এমপি শামীম ওসমানের ইন্ধনে ও প্ররোচনায় উক্ত ঘটনা ঘটায়। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ফুটপাতে হকার বসানোর কথা বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার কারণেই বিবাদীরা পরিকল্পিতভাবেই মেয়র আইভীর শান্তির মিছিলে ভয়াবহ হামলা করে। কারণ ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে এ নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে মেয়রের একাধিকবার কথা হয়। এমপি সেলিম ওসমান এ বিষয়ে পত্র দিলে সেটারও জবাব দেওয়া হয়। খোদ প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী যানজট নিরসন ও জনগনের হাটাচলার জন্য ফুটপাত অবাধ রাখতেই সচেষ্ট ছিল সিটি করপোরেশন। কিন্তু নির্বাচনী এলাকা এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ার পরেও নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার বসবে মর্মে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের লাগাতার ঘোষণা, হুমকি, প্রশ্রয় ছিল বিবাদীদের জন্য উস্কানিমূলক। এ কারণেই বিবাদীরা ওই ঘটনার সাহস পায়।
আর্জিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী বিকেল ৪টায় মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও অন্যদের সাথে নিয়ে পদযাত্রা শুরু করে। বিকেল সাড়ে ৪টায় পদযাত্রাটি বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া সায়াম প্লাজার সামনে আসলে বিবাদীরা অত্যাধুনিক পিস্তল, রিভলবার, শর্টগান ও দেশী অস্ত্র নিয়ে চারদিক থেকে হামলা করে। বৃষ্টির মত ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। মেয়র সহ সঙ্গে থাকা লোকজনদের হত্যার উদ্দেশ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। হামলায় আইভী সহ ৪৩ জন গুরুতর ও শতাধিক আহত হয়।
অপর দিকে ওই ঘটনায় নিয়াজুলের মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয়, নিয়াজুল একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। ১৬ জানুয়ারী বিকেল ৪টায় তিনি ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়ীক কাজে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের দিকে যেতে থাকেন। সোয়া ৪টায় তিনি চাষাঢ়ায় আসলে দেখতে পান দক্ষিণ দিক থেকে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর নেতৃত্বে আসামী অস্ত্রধারী ক্যাডার, জামায়াত বিএনপির ক্যাডাররা চাকু, ছোরা, রামদা, চাইনিজ, কুড়াল এবং লাঠিসোটা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চাষাঢ়ার দিকে আসছে। তারা রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে না দেওয়ায় পায়ে হেঁটে চাষাঢ়ায় সায়াম প্লাজা সংলগ্ন বিবি রোড সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সামনে পৌছানোর সাথে সাথে বাদীকে দেখামাত্র মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর হুকুমে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অস্ত্রধারী আসামীরা বাদীকে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে। বাঁচতে চাইলে সুফিয়ান, উজ্জল, বাবু ও মিমন হত্যার উদ্দেশ্যে পেটায়। নিয়াজুলকে মারধর করে তার সঙ্গে থাকা ইতালীর তৈরি পয়েন্ট ৩২ বোরের পিস্তল যার বোর নং এফ -৩৩৬২২ ছিনিয়ে নেয়। এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন, নগদ ২ লাখ টাকা।
ওই অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হলেন আবু সুফিয়ান (জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক), মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ (সিটি করপোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর), অসিত বরণ বিশ্বাস (১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর), কামরুল হুদা বাবু (শহর যুবলীগের সহ সভাপতি), কবির হোসাইন (কাউন্সিলর ১৮নং ওয়ার্ড), আহমেদ আলী রেজা উজ্জল (মেয়র আইভীর ভাই ও শহর যুবলীগের সেক্রেটারী), আমিরুল ইসলাম (২২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি), সাংবাদিক মাসুম (নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মাসুম), জাহাঙ্গীর আলম (জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক), সরকার আলম (যুবদল নেতা), হাজী নেওয়াজ, সৈকত মেম্বার, মোতালিব, ফারুক ও লিপু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজুল কাদির মিমন ও মো. হান্নান।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, বিবাদীরা নিয়াজুলকে মারধর করে তার সঙ্গে থাকা ইতালীর তৈরি পয়েন্ট ৩২ বোরের পিস্তল যার বোর নং এফ -৩৩৬২২ ছিনিয়ে নেয়। এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন, নগদ ২ লাখ টাকা। বাঁচতে চাইলে সুফিয়ান, উজ্জল, বাবু ও মিমন হত্যার উদ্দেশ্যে পেটায়।