সত্যের খোঁজে আমরা
দিনাজপুর প্রতিনিধি
মোঃওয়াজ কুরনী
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে গৃহবধূ ফেরদৌসি বেগম (২২) হত্যাকান্ডের মাত্র ৬ ঘন্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঘাতক স্বামীকে। এছাড়াও হত্যাকান্ডের আলামত হিসেবে ঘাস কাটার কাচি এবং বস্তা জব্দ করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) আব্দুল্লাহ আল মাসুম।
তিনি জানান, গত ৪ বছর আগে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম বালিঘাটা গ্রামের ফিরোজ মিয়ার মেয়ে ফেরদৌস বেগমের সাথে সাগর আহম্মেদের বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকেই সন্তান না হওয়া সহ নানা কারণে ফেরদৌসীকে শারীরিক নির্যাতন করতো তার স্বামী। সর্বশেষ গত এক মাস পূর্বে ফেরদৌসী বেগমকে মারপিট করে তার স্বামী সাগর। নির্যাতনের শিকার ফেরদৌসি রাগ করে বাবার বাড়িতে চলে যায়। কয়েকদিন পর স্বামী সাগর শশুর বাড়িতে যায় স্ত্রীকে নিয়ে আসতে। তবে বারবার নিজেদের মেয়েকে নির্যাতন করার প্রতিবাদে শশুর বাড়ির লোকজন তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে। এ সময় তার স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছিলেন।
এই কর্মকর্তা আরো জানান, এরপর স্ত্রীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে সাগর। বুধবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দুরে ধানের জমিতে গরুর জন্য ঘাস কাটতে যায় ফেরদৌসি বেগম। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছু সময় পর সাগর নিজেও সেই জমিতে গিয়ে স্ত্রীকে জাপটিয়ে ধরে জমির আইলের (পানি প্রবাহের সরু ড্রেন) উপর শুইয়ে দেয় এবং দুই হাত বেঁধে ফেলে। এরপর নিজের কাছে থাকা দড়ি দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে সাগর। মৃত্যু নিশ্চিত হলে সেখানে ফেলে রেখে চলে যায় ঘাতক স্বামী।
এরআগে বুধবার দুপুরে ধানের জমিতে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ পড়ে থাকেন দেখেন খাড়িতে মাছ শিকার করতে যাওয়া কয়েকজন আদিবাসী নারী পুরুষ। পরে তারা গ্রামবাসীকে জানালে স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দেয়। দুপুর সাড়ে ৩টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ নিজেদের হেফাজতে নেন। সন্ধা ৬টায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী ২নং পালশা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর-মরিচা গ্রামের মৃত নওশা মিয়ার ছেলে সাগর আহম্মেদকে (২৪) আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার ঘটনা শিকার করে।
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, পুলিশ সুপার স্যারের সার্বিক নির্দেশনায় আমরা ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন এবং আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। বৃৃহস্পতিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। দুপুরে ঘাতক স্বামীকে দিনাজপুরের আদালতে উঠানো হবে। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবাববন্দী দিবেন।