উপকরণ, নৈকট্য, মর্যাদা, অবস্থান, ব্যবস্থা, মাধ্যম যা দ্বারা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছা যায়। তাজুল আরূস গ্রন্থকার বলেন-
قال ابن الاثيرهى فى الاصل ما يتوسل به الى الشئ ويتقربه-
ইবনুল আছীর বলেন, ওসিলা মূলত যা দ্বারা কোন কিছুর কাছে পৌঁছা যায় বা নৈকট্য হাসিল করা যায়। আল্লামা আলূসী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
”الوسيلة هى ما يتوسل به ويتقرب الى الله عزوجل من فعل الطاعات وترك المعاصى“
ওসিলা হলো, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়, যেমন- নেক আমল করা এবং মন্দ কাজ পরিত্যাগ করা। আর তাওয়াস্সুল অর্থ হলো মাধ্যম খোঁজা। মহান রাব্বুল আলামীন ঈমানদারদেরকে তার কাছে পৌঁছার জন্য ওসিলা তালাশ করতে বলেছেন। ঈমানের পাশাপাশি ভাল কাজ করা এবং ঈমান বিনষ্টকারী আমল থেকে বেঁচে থাকা যেমন ওসিলা, তেমনি নবী-রাসূল এবং আল্লাহ্র মাকবুল নেককার বান্দাহ্রাও আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের ওসিলা। নবী-রাসূলগণের ওসিলাতেই বিশ্ববাসী আল্লাহকে চিনতে পেরেছেন। এরপর তাঁদের উত্তরাধিকারী আউলিয়ায়ে কেরামগণের ওসিলাতেই পথহারা উম্মত আল্লাহ্র পরিচয় লাভ করেছে। আল্লাহ্ তা’আলা মানব জাতির হেদায়তের জন্য দুটি ধারাকে আবশ্যক করে দিয়েছেন- তা হলো যথাক্রমে কিতাবুল্লাহ্ ও রিজালুল্লাহ। কিতাবুল্লাহ্ তথা আসমানী নাযিলকৃত কিতাবসমূহ। আর রিজালুল্লাহ্ হলো, নবী-রাসূল ও আউলিয়ায়ে কেরামদেরকে ঝুনানো হযেছে। এ দু’ধারার কোনটিকে অবজ্ঞার সুযোগ নেই।
আমরা দৈনিন্দিন জীবনে প্রায় নানা হতাশা, নিরাশা, বিপদ-আপদ ও বিপযর্য়ের সম্মুখীন হই। তখন তা থেকে পরিত্রাণ লাভের নিমিত্তে দো‘আ, মুনাজাত স্বীয় সৎ আমল, আল্লাহ্র একান্ত প্রিয়ভাজন ও নৈকট্যশীল বান্দাহদের ওসিলা গ্রহণ করে আল্লাহ্র নিকট দু’হাত তুলে দো‘আ করা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি, নিত্য-নৈমিত্তিক আমলও। এটা হলো বৈধ, শরিয়ত অনুমোদিত ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
ইসলামে তাওয়াস্সুল ও ওসিলা
ওসিলা শরিয়তসম্মত জায়েয। কারো মতে মুস্তাহাব।
কারো মতে ওয়াজিব। এমর্মে আল্লাহ্র বাণী-
يَااَيُّهَا الذين اَمَنُوْا اتقوا الله وابتغوا اليه الوسيلة- (سورة المائده- ৩৫)
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো এবং তাঁর নৈকট্য অর্জনের জন্য ওসিলা তালাশ করো।
[সূরা মায়িদা: ৩৫]
ওসিলা সম্পর্কে মতবিরোধ
ইসলামের প্রাথমিক যুগে কেউ ওসিলার বৈধতার ব্যাপারে আপত্তি করেননি। কুফর, শিরক ও বিদআত বলাতো দূরের কথা কেউ নাজায়েয পর্যন্ত বলেননি। ওসিলা সম্পর্কে মতবিরোধের সূচনা সম্পর্কে فيضل القدير কিতাবে আবদুর রউফ মুনাভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (১০৩১হি.) ইমাম তকী উদ্দীন সুবকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর বাণী এভাবে বর্ণনা করেন-
وَيُحْسِنُ التَوَسُّلُ وَالاِسْتِعَانَةِ وَالتَشَفِعُ بِالنبى صلى الله عليه وسلم اِلَى رَبِّهِ وَلَمْ يَنْكِرْ ذَالِكَ اَحَدٌ جَاءَ اِبْنُ تَيَمِيَةَ فَانكَر ذَالكَ-
স্বীয় প্রভুর কাছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ওসিলা দেওয়া, তাঁর মাধ্যমে সাহায্য কামনা করা এবং তাঁর সুপারিশ কামনা করা ভাল। ইবনে তাইমিয়য়া আসার পূর্বে কোন পূর্বসূরি আলেম এটাকে মন্দ কাজ বলেননি বরং তিনি এটাকে প্রথম মন্দ বিদ‘আত বলেন। মুনাবী, যাইনুদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে তাজুল আরেফীন (১০৩১ হি.), ফায়জুল ক্বাদীর শরহু জামিউস সগীর, বৈরুত। দারুল কুতুবিল ইসলামিয়া, প্রকাশ-১৪১৫ হিজরি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৭০।