এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। দীর্ঘক্ষণ গাড়ি না পেয়ে হেঁটে রওনা দিচ্ছেন অনেকে। যারা বাসে উঠতে পারছেন তাদের অভিযোগ জ্বালানির দাম বৃদ্ধির অযুহাতে আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া।
জ্বালানি তেলের নতুন দর কার্যকরের পর শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কে দেখা মিলছে না গণপরিবহনের
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর সড়কে দেখা দিয়েছে গণপরিবহন সংকট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। দীর্ঘক্ষণ গাড়ি না পেয়ে হেঁটে রওনা দিচ্ছেন অনেকে। যারা বাসে উঠতে পারছেন তাদের অভিযোগ জ্বালানির দাম বৃদ্ধির অযুহাতে আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া।
জ্বালানি তেলের নতুন দর কার্যকরের পর শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কে দেখা মিলছে না গণপরিবহনের।
নির্ধারিত বাসের জন্য সড়কে দীর্ঘ অপেক্ষা যাত্রীদের। কোনো বাস দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। ধাক্কাধাক্কি করে যাত্রীরা উঠছেন বাসে। বাসে উঠতে না পেরে নারী ও বয়স্ক যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
প্রায় প্রতিটি বাসেই দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
চালক ও সহকারীরা জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গাড়ি নামাচ্ছে না পরিবহন মালিকরা। পাম্প থেকেও মিলছে না পর্যাপ্ত তেল। এ অবস্থায় জ্বালানির দামের সাথে সমন্বয় করেই রাখা হচ্ছে ভাড়া।
বাড়তি ভাড়া রাখার কারণে বাকবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন যাত্রীরা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জ্বালানির দামের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন বাস মালিকরা।
এদিকে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়কে কমেছে গণপরিবহনের সংখ্যা, বন্ধ রয়েছে অনেক পেট্রোল পাম্প।
চট্টগ্রামে রাত থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ। শনিবার সকাল থেকে এ সংগঠনের শ্রমিকরা বিভিন্ন মোড়ে যান চলাচলে বাধা দেয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। এর মধ্যে সুযোগ বুঝে কয়েকগুণ ভাড়া আদায় করছেন সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশা।
রাজশাহীতে বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল নেমে এসেছে অর্ধেকে। এর মধ্যে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ অনেক যাত্রীর।
একই অবস্থা খুলনায়ও। রংপুরে সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে বেশ কিছু পেট্রোল পাম্প। তবে স্বাভাবিক রয়েছে যানচলাচল।
ফেনীতেও বন্ধ রয়েছে কয়েকটি পেট্রোল পাম্প। অন্যদিকে, যেসব পাম্প খোলা রয়েছে সেগুলোতে বিক্রি কম, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। লক্ষ্মীপুর থেকে বেশিরভাগ দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি সকাল থেকে।
রংপুর, ফেনীসহ অনেক জেলায় জ্বালানি তেল সংকটের অজুহাতে সকাল থেকে বন্ধ অনেক ফিলিং স্টেশন। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে, অকটেনের দাম বৃদ্ধির কারণে রাঙামাটি শহরের এক মাত্র বাহন অটোরিকশা বন্ধ রেখেছে চালকরা। এছাড়াও হবিগঞ্জ, বাগেরহাট, চুয়াডাঙা, যশোর, টাঙ্গাইলসহ অনেক জেলায় সীমিত আকারে চলছে যানবাহন।
শুক্রবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে এতে।
নতুন দামে আগের চেয়ে ডিজেল ও কেরসিনের দাম ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১৪ টাকা। পেট্রল ৮৬ টাকা থেকে ৪৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা এবং অকটেন লিটার প্রতি ৮৯ টাকা থেকে ৪৬ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩৫।
তেলের দাম বাড়তে না বাড়তেই রাতেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা জানান এরই মধ্যে ট্রাকের ভাড়া বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের এই মূল্য বৃদ্ধিতে জীবনযাত্রা আরও কষ্টকর হয়ে গেল বলে জানান সাধারণ মানুষ।
এদিকে, দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশন গত ছয় মাসে জ্বালানি তেল বিক্রিতে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে।
শুক্রবার সকালে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ইঙ্গিত দিতে না দিতেই রাত ১০টায় জ্বালানির দাম বাড়িয়ে জারি হল প্রজ্ঞাপন। এতে বলা হয়, রাত ১২ টা থেকে কার্যকর হবে নতুন দাম।
এই দুই ঘণ্টায় হট্টগোল, হাতাহাতি, যানজটসহ চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় অধিকাংশ ফিলিং স্টেশনে। আগের দামে তেল নিতে রাতে ঘুম হারাম করে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান চালকরা। পরিস্থিতি সামলাতে পারেনি পুলিশও।
এসময় অনেক ফিলিং স্টেশনে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে তেল না দেয়ার আভিযোগ ওঠে। কেউ বা মেশিন নষ্টসহ দেখায় নানা অজুহাত। পূর্বের দামে কেনা তেল নতুন দামে বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা আদায় তাদের লক্ষ্য।
রাত ১২ টার পরপরই নতুন দামে শুরু হয় তেল বিক্রি। তবে বাড়তি দামে তেল না কিনে ফিরে যান অনেকেই।
ফিলিং স্টেশন মালিকরা জানান, মজুত ঠেকাতে প্রতিবারই হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের বাড়তি দাম কার্যকর করা হয়।
লিটারে এক লাফে ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ আর হতাশা ব্যাক্ত করেছেন ভোক্তারা।