সত্যের খোঁজে আমরা
বিলকিছ আক্তার রুবি স্টাফ রিপোর্টার
টঙ্গী তা'মীরুল মিল্লাত মাদ্রাসার ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মহতাব উদ্দিন।
২৩ শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং সোমবার সকাল থেকে ছাত্রদের আন্দোলনে উত্তাল ছিল তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী ক্যাম্পাস। ছাত্রদের একদফা এক দাবি ছিল সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মহতাব উদ্দিন এর পদত্যাগ চাই। সময়ের পরিক্রমায় আন্দোলন আর দৃঢ় হতে থাকলে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মিজানুর রহমান এর নিকট পদত্যাগ পত্র জমা দেন মাওলানা মহতাব উদ্দিন। মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মিজানুর রহমান তার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, মাওলানা মহতাব উদ্দিন তার চাকরীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। বার বার তিনি মুচলেকা দিয়ে চাকরিতে ফিরে আসলেও দুর্নীতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেননি। বিগত স্বৈরাচার আওয়ামীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নেরও অনেক চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন বিগত দিন গুলোতে। তিনি স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের সহযোগিতায় মাদ্রাসার সকল বিভাগীয় জায়গায় একক আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। তার ভয়ে শিক্ষকরা পর্যন্ত কোন কথা বলার সাহস করতেন না। তার ব্যবহার ছিল খুবই নিম্ন পর্যায়ের।
আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আফজাল জানান অসংখ্য ছাত্রের নাম সংশোধনের নামে হয়রানি। ছাত্রদের কাছ থেকে অধিক পরিমাণে টাকা আত্মসাৎ করেন। যেই কাজে খরচ ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা সেই কাজে অফিস থেকে বসে তার দালালদের মাধ্যমে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা করে নেয়ার রেকর্ডও আছে। আমার এক বড় ভাই সাব্বির আহমেদ গত রমজানে সে যখন অফিসে যোগাযোগ করে তার সাটিফিকেটের ফ্রেশ কপি তথা চার কপি কাগজ তুলবে যার জন্য তার কাছে চাওয়া হয়েছে ৬৫০০ টাকা। সে মাদ্রাসা অফিসে খবর নিয়ে জানতে পারলো অফিসিয়াল খরচ সর্বচ্চ গেলে ২৫০০ টাকা। ততক্ষণে সাব্বির আহমেদ মাদ্রাসা ভিপি মহোদয়কে বিষটা অবগত করলে তিনি অফিসে এসে কথা বললে ৬৫০০ টাকার কাজ ৩৩০০ টাকায় সম্পূর্ণ করে দেওয়ার আশ্বস্ত করেন। তবুও নানান অজুহাতে তাকে হয়রানি কারায়। এভাবে মাদ্রাসার সকল অফিসিয়াল জায়গা গুলোতে দিনের পর দিন কোন এক অজানা শক্তিকে পুঁজি করে দুর্নীতি করে আসছে মাওলানা মহতাব উদ্দিন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের থেকে মাদ্রাসার অনেক সিনিয়র কামিল শ্রেণীতে পড়ুয়া আকরাম খান জানান, দীর্ঘ ১৪ বছর আমি এই ক্যাম্পাসে পড়ালেখা করে আসছি। মাওলানা মহতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা সময় নানান অভিযোগ কিছু দিন পর পর উঠে আসে। দীর্ঘদিন পড়ার সুবাদে মাদ্রাসার দায়িত্বশীল সম্মানিত শিক্ষকদের সাথে মাদ্রাসার নানান বিষয়ে কথা বলার সুযোগ হয়। নাম জানাতে ইচ্ছুক না এমন কিছু শিক্ষক আমাকে শিউর করেছেন এই অভিযুক্ত মাহতাবউদ্দিন মাদ্রাসার কনস্ট্রাকশনের কাজে লক্ষ লক্ষ টাকার কমিশন খেয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। কনস্ট্রাকশন বাণিজ্য ভর্তি বাণিজ্য হোস্টেল এবং অফিসে একক আধিপত্য বিস্তার ছাত্র এবং গার্জিয়ানদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে আসছে।
ফজিল শ্রেণীতে পড়ুয়া নাহিদ হাসান জানান, বিগত স্বৈরাচারের ধূসরদের সাথে স। গভীর সম্পর্ক রেখে মাহতাব উদ্দিন নানান অপকর্ম করে আসছেন। আমরা কিছুদিন আগে মাদ্রাসার ভিপি আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ এর এক বক্তব্যতে শুনেছি কে-বা কাহারা নাকি আমাদের ক্যাম্পাসের অফিসিয়াল কাগজপত্র নিয়ে দীর্ঘদিন ঝামেলা করে আসছিল। ক্যাম্পাসকে সামনের দিকে পথ চলতে বাধাগ্রস্ত করে রেখেছেন। পরবর্তীতে আমরা কিছু ছাত্র এই বিষয়ে অধিক আগ্রহ থেকে তদন্ত করতে থাকি কে এমন ক্ষতি করলো আমাদের ক্যাম্পাসের এতদিন অফিসিয়াল কাগজপত্র আটকিয়ে রেখে। আমরা একপর্যায়ে জানতে পারি মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মহতাব উদ্দিন একক ক্ষমতার মাধ্যমে আওয়ামী স্বৈরাচার ধূসরদের সাথে গভীর সম্পর্ক করে এমন কাজ করেছেন।
এই বিষয়ে ছাত্রসংসদের ভিপির সাথে যোগাযোগ করলে ভিপি আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, শিক্ষকদের থেকে ছাত্ররা শিখার জন্য আসেন। ছাত্রদের কাছে শিক্ষক হবেন একজন আদর্শ। যেসব শিক্ষক ছাত্রদের আদর্শ হয়ে ওঠতে পারেননি তাদের শিক্ষকতা পুরো প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর। জানা গেছে, ওনার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনে ২০১০ সালেও ছাত্ররা বের করে দিয়েছিল। ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোন কর্যক্রমে তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। অথচ বিধি হচ্ছে কোন শিক্ষক টানা ২ বছর কন্টিনিউ করতে না পারলে তার এমপিও বাতিল হয়। "রেডলাইট" নামে একটা সন্ত্রাসগ্রুপও তিনি পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ করেছে ছাত্ররা। প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় সবকিছু তার কাছেই নিয়ন্ত্রিত বলেও ছাত্ররা জানান।