সত্যের খোঁজে আমরা
হবে নির্বাচনের ক্ষণগণনা। মধ্য নভেম্বরের মধ্যে তফশিল ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছে নির্বাচন কমিশনও। কিন্তু এখনো নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে অনড় দেশের প্রধান দুই দল-আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নিজেদের দাবি নিয়ে গত কয়েক মাস দুদল ধারাবাহিকভাবে ‘পালটাপালটি’ কর্মসূচি পালন করলেও এখন তা চূড়ান্তভাবে মাঠে গড়াচ্ছে। আজ দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একইদিনে একই সময়ে পৃথক মহাসমাবেশ করবে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সরকারি দলের ও নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ হবে।
আওয়ামী লীগের এই মহাসমাবেশের নাম দেওয়া হয়েছে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ। দুদলই নিজেদের শক্তি পরীক্ষার লড়াইয়ে নামছে। এজন্য ব্যাপক লোকসমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সারা দেশ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন। তবে যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও বিএনপির মতো একই দাবিতে জামায়াতে ইসলামীও সমাবেশ করবে। অনুমতি না পেলেও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে কর্মসূচি পালনে অনড় দলটি। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলও প্রস্তুত। রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মী এনে বড় শোডাউন করবে তারা। সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্বে এ তিন দলের মহাসমাবেশ নিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে, জনমনেও দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা ও উদ্বেগ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলো একইদিনে কাছাকাছি স্থানে কর্মসূচির কারণে রাজপথে সহিংসতার শঙ্কা রয়েছে। সহিংসতা এড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোকেও সহনশীলতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। দলগুলো নিজেদের মধ্যকার বোঝাপড়ার পরিবেশ সৃষ্টি না করলে চলমান রাজনৈতিক সংকট দেশকে আবারও ভয়াবহ কোনো পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এদিকে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে বলে জানিয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনে সমাবেশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থায় থাকবে। এর বাইরে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হবে সতর্ক পাহারা। প্রতিটি পাড়া-মহল্লার মোড়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কে শামিয়ানা টানিয়ে সকাল থেকে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর সঙ্গে দলীয় সংসদ-সদস্য ও কাউন্সিলররাও তাদের অনুসারীদের নিয়ে মাঠে অবস্থান নেবেন।
অন্যদিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশে বড় ধরনের জমায়েতের প্রস্তুতি দলটির। এজন্য সারা দেশের নেতাকর্মীরা আগেভাগেই ঢাকায় এসেছেন। তবে সতর্ক থেকে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি সফলের জন্য সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ মহাসমাবেশ থেকে চূড়ান্ত কর্মসূচি দেওয়া হবে। যা তফশিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত লাগাতারভাবে পালনের কথা রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও আজ প্রায় একই দাবিতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করবে জামায়াতও। তাদের কর্মসূচি পালনে পুলিশ অনুমতি না দিলেও পূর্বঘোষিত শাপলা চত্বরেই নেতাকর্মীদের থাকতে বলা হয়েছে। এদিন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিএনপি সমমনা অন্তত ৩৭ রাজনৈতিক দলও সমাবেশ করবে।
তবে মহাসমাবেশ ঘিরে নানা শঙ্কা ও উদ্বেগ থাকলেও তিন দলের নেতারাই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা শান্তি সমাবেশ করব। আমরা অশান্তি করতে চাই না। সরকারে আছি, আমরা কেন অশান্তি করব? বিএনপি অশান্তি করতে চায়। আমরা অশান্তির বিরুদ্ধে শান্তির শোভাযাত্রা দেখাতে চাই।
নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা কোনো আশঙ্কা করছি না। আমরা শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করব। মহাসমাবেশের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাপ দেওয়া এবং বাধ্য করার চেষ্টা করা। সরকারের যেন শুভবুদ্ধির উদয় হয়। তারা একদফা দাবি মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটি নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে অনড় ক্ষমতাসীন দল। অন্যদিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী অনেক রাজনৈতিক দল। অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে দলগুলো। আজ একযোগে পৃথক মহাসমাবেশ থেকে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে।
এদিকে রাজনীতিক-পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দলগুলোর অনড় অবস্থান সাধারণ নাগরিকদের শঙ্কিত করে তুলছে। জনগণের কথা ভেবে আলোচনা বা সমঝোতায় আসতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ক্ষমতাসীন দলের।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবিরের মতে, যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবস্থানই তো মানুষের মধ্যে একটা শঙ্কা তৈরি করে। এই রাজনৈতিক দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বাভাবিকভাবে একটা অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করে। আমরা সেটা চাই না। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। কারণ আমাদের জীবনযাত্রা এমনিতেই তো চাপের মুখে আছে, এটার ওপর বাড়তি কোনো চাপ না পড়ুক এটাই আমাদের চাওয়া।