দিনাজপুর প্রতিনিধি
মোঃ ওয়াজ কুরনী
দিনাজপুরের হিলিতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের দাম নিয়ে চিন্তিত বর্গাচাষিরা। জমির মালিককে বর্গার টাকা, পানির দাম, জমি চাষ, সার-বীজ, কাটা-মাড়াইসহ সবকিছু পরিশোধ করার পর আদৌ কিছু থাকবে কি না, এমন চিন্তা ঘুরপাক করছে বর্গাচাষিদের মাথায়। তারা বলছেন, যদিও আবাদ ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে ধানের যে দাম, তাতে তো শুধু খড়টুকুই লাভ থাকবে পারে। আর যারা নিজেররা শ্রম দিয়েছেন, তারা হয়তো ৬ মাসের বাড়ির খাবারের চাল তৈরির জন্য ধান ঘরে তুলতে পারবেন।
মঙ্গলবার (২১ মে) হিলিতে কথা হয় ইসমাইলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার নিজের সামাস্য কিছু জমি আছে। তারসঙ্গে ১০ হাজার টাকা বিঘা (৩৩ শতক) ২ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে এবার ইরি-বোরো ধান আবাদ করি। কিন্তু এবার পানি, সার-বীজ, শ্রমিক থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম গেলো বারের চেয়ে বেশি। প্রতি বিঘা জমিতে জমির মালিককে ১০ হাজার টাকা দিয়ে খরচ পড়েছে কারও ১৯ হাজার টাকা আবার কারও ২০ হাজার টাকার মতো।’
আরেক বর্গাচাষি উপজেলার নয়পাড়া গ্রামের মো. মজনু মিয়া বলেন, ‘আমি ৩ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করি। ৩ বিঘা জমিতে ধান পেয়েছি গড়ে ৬৬ মণ। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ১৮০ টাকা দরে। সেই হিসাবে ৬৬ মণ ধানের বিক্রি দাম হবে ৭৬ হাজার টাকার মতো। কিন্তু জমির মালিককে প্রতিপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে দিয়ে আমার খরচ পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা।’
মজনু মিয়া আরও বলেন, ‘আমি নিজে শ্রম দিয়ে সার ছিটানো, ঘাস তোলাসহ অনেক কাজ করেছি বলে হয়তো আমার খরচ কিছুটা কম পড়েছে। আর যারা সবকিছু শ্রমিক দিয়ে করেছেন, তাদের খরচ ৬৫ হাজার টাকা মতো হবে। তাদের লাভ কম হবে। তবে যে খড় পাবো, তা দিয়ে বাড়ির গরুর বছরের খাবার হবে এটাই লাভ। ধানের দাম যদি ১ হাজার ৪০০ টাকা মন বিক্রি হতো, তাহলে বর্গাচাষিরা কিছুটা লাভবান হতেন।’
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা. আরজেনা বেগম বলেন, ‘চলতি ইরি-রোরো মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ৩ টি ইউনিয়নে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে। তবে আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৬১৬ হেক্টর জমিতে। ১ হেক্টর জমিতে আবাদ বেশি হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু জমিতে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। ফলনও ভালো হচ্ছে। এছাড়া, উন্নত কিছু জাতের ধান আছে আশা করছি, সে-সব ধানের ফলন আরও বেশি হবে। এতে কৃষক লাভবান হবে।’