দিনাজপুর হিলিতে প্রচণ্ড গরমে বেড়েছে কচি তালের শাঁসের কদর জ্যৈষ্ঠ মাস মধুমাস। এমাসে বাজারে সবধরনের ফল দেখা যায়। প্রতিনিয়তই বাড়ছে তাপদাহ। গরমে মানুষ

দিনাজপুর হিলিতে প্রচণ্ড গরমে বেড়েছে কচি তালের শাঁসের কদর জ্যৈষ্ঠ মাস মধুমাস। এমাসে বাজারে সবধরনের ফল দেখা যায়। প্রতিনিয়তই বাড়ছে তাপদাহ। গরমে মানুষ

দিনাজপুর হাকিমপুর প্রত

হাঁসফাঁস করছে। গ্রীষ্মের তীব্র গরমে একটু স্বস্তি পেতে নানারকম ফল খাচ্ছে মানুষ। এসব ফলের তালিকায় রয়েছে তালের শাঁসও। কচি তালের শাঁস পথচারী ও সাধারণ মানুষের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। সুস্বাদু তালের শাঁস শরীর-মনকে সতেজ রাখে। তাই তো হাকিমপুর উপজেলার হাট-বাজারে তালের শাঁসের বেশ কদর বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তাল শাঁস স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিতাও অনেক। গরমে তালের শাঁস খেলে পানিশূন্যতা দূর হয়, ক্লান্তি কাটে, এমনটি লিভারও পরিষ্কার হয়।

১০০ গ্রাম তালের শাঁসে থাকে ৪৩ ক্যালোরি। আর এ কারণেই ওজন কমাতেও ভূমিকা রাখে এটি। এছাড়া এতে ১১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে। এতে আরও থাকে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন সি, এ, ই, কে, বি৭ ও আয়রন। এসব উপাদান শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।

মঙ্গলবার (৩০ মে) হিলি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ সময়ে আম, কলা, লিচুসহ সবরকম ফল বাজারে এসেছে। তেমনি এ গরমে বাজারে এসে গেছে কচি তাল। কচি তালের শাঁস পছন্দ করে না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। তা ছাড়া পুষ্টিগুণে ভরা মানবদেহের জন্য উপকারী তালের শাঁস গরমে মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। পাশাপাশি মৌসুমি ফল হিসেবে তালের শাঁস অবদান রাখছে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও। যদিও কালের বিবর্তনে উপজেলার গ্রামাঞ্চলে কমে গেছে তাল গাছের সংখ্যা। পৌর শহরে এবং উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কচি তাল বিক্রি করতে দেখা গেছে। সুস্বাদু তাল শাঁসের জন্য ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছে বিক্রেতাদের কাছে।

কথা হয় তাল শাঁস বিক্রেতা আবুল কালাম এর সাথে তিনি বলেন, বছরের অন্যান্য সময় দিনমজুরের কাজ করলেও এ সময়টাতে তিনি তার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাম গঞ্জের তাল গাছ ডেকে নিয়ে সেই তাল বিভিন্ন হাটবাজারে কচি তালের শাঁস বিক্রি করে থাকেন। আগে তাল গাছ ডেকে নিতাম কম দাম পরতো কম দামে বিক্রি করতাম। গ্রাম গঞ্জে তাল গাছ কমে যাওয়ায় আগের মতো কম দামে তাল গাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এবার পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে থেকে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। একটি তাল বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়, আকারে বড় তাল ২০-২৫ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিচ তাল শাঁস বিক্রি করি পাঁচ টাকা। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার টাকার তালের শাঁস বিক্রি করি। এতে৫-৬শ টাকা লাভ থাকে, যা দিয়ে আমাদের সংসার মোটামুটি ভালো ভাবেই চলে যায়।

কথা হয় পৌর শহরের গোডাউন মোড়ে তালের শাঁস বিক্রেতা মোখলেস হোসেন এর সাথে তিনি বলেন, মৌসুমের শুরু তাই তাল নিয়ে এসেছি। কচি তাল শাঁসের চাহিদা আছে তাই বিক্রি ও মোটামুটি ভালো হচ্ছে। এবার তালের ফলন অনেকটাই কম। গেলো বছর ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে তাল গাছ ক্রয় করতেন ব্যবসায়ীরা। তবে বর্তমান গাছের দাম আগের মতোই আছে, কিন্তু ফলন অনেক কম। এবছর প্রতিটি তাল শাঁস বিক্রি করতেছি ৫ থেকে ৬ টাকা পিচ।

তাল ব্যবসায়ী মোখলেছ হোসেন বলেন, তিলকপুর থেকে তাল নিয়ে হিলি বাজারে এসেছি। প্রায় ১০ বছর ধরে এই তালশাঁসের ব্যবসা করছি। গত কয়েক বছর ধরে হিলির বিভিন্ন স্থানে তালশাঁস বিক্রি করি। বেশি আনিনি, অল্প স্বল্প করে এনেছি। কারণ বাজারে আগের চেয়ে অনেক তাল শাঁস বিক্রেতা বেড়েছে।

হিলি বাজার ও ভূমি অফিসের সামনে তালের শাঁস বিক্রেতা ইলেম মিয়া সোহান আলী বলেন, জৈষ্ঠ্যমাস গরমে তাল শাঁসের কদর বেড়েছে। দোকানে বেচা বিক্রি ভালোই হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার টাকা বিক্রি করছি। সবাই কেনার জন্য আসছে, তবে দাম বেশি না হওয়ায় সবাই কম বেশি করে নিচ্ছে।

তাল শাঁস কিনতে আসা মিজানুর রহমান বলেন, প্রচন্ড গরমে তালের শাঁস স্বাদে ভরা। আমার পরিবারের সবার পছন্দ। তাই বাজারে এসে কচি তালশাঁস দেখতে পেয়ে পরিবারের জন্য ২০ পিচ নিয়েছি। দেখছি দামও অনেক কম। পরিবারের সবাই অনেক খুশি হবে।

তাল শাঁস কিনতে আসা গৃহবধূ শাহনাজ পারভীন বলেন, গরমে তাল শাঁস সবার পছন্দ। বাজারে এসে তাল শাঁস দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য ১০ পিচ নিয়েছি। প্রতি পিচ পাঁচ টাকা করে কিলাম। শুনেছি তাল শাঁস খাইলে না কি অনেক উপকার আছে তাই বাজারে আসলে কম বেশি নেই। বাড়িতে নিয়ে গেলে সবাই খুশি হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *