🇧🇩নাটোরের সিংড়ায় মসজিদের ইমাম নিয়োগ দেয়াকে কেন্দ্র করে আ'লীগের এক পক্ষের ওপর আরেক পক্ষের হামলা সুযোগে হিন্দু বাড়ি হামলা
নাটোরের সিংড়া উপজেলায় মসজিদে ইমাম নিয়োগ ও আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে আওয়ামী লীগের এক পক্ষের নেতা-কর্মীরা আরেক পক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিংড়ার উপজেলার ইটালী ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের এক পক্ষের অভিযোগ, হামলাকারী ব্যক্তিরা তাঁদের দোকান, বাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন।
হামলার শিকার ও স্থানীয়রা জানান, গত রোববার বিকেলে পাকুড়িয়া জামে মসজিদের ইমাম নিয়োগ করা নিয়ে গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্য আলিফ হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এর জেরে গতকাল বিকেল চারটার দিকে সিংড়া উপজেলা আ'লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইটালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ ও সাবেক ইউপি সদস্য আলিফ হোসেনের নেতৃত্বে ২৫০ থেকে ৩০০ লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে গ্রামের বাজারে হামলা করেন। এসময় হামলাকারী ব্যক্তিরা বাজারের অন্তত ৭টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হামলাকারী ব্যক্তিদের বাধা দিতে গেলে চা-বিক্রেতা রানাকে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে হামলাকারী ব্যক্তিরা বাজারের পাশের বাসিন্দা আইনজীবী মানিক লাল চক্রবর্তীর বাড়িতে হামলা করেন। এসময় মানিক লালের কার্যালয়ের আসবাব ও নথিপত্র তছনছ করা হয়। প্রতিবাদ করলে মানিক লালের ছোট ভাই ও সাবেক ইউপি সদস্য এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তা লাল চক্রবর্তীকে মারধর করা হয়।
প্রায় দুই ঘণ্টা তা-ব চালানোর পর হামলাকারী ব্যক্তিরা সন্ধ্যা ছয়টার দিকে গ্রাম ছেড়ে যান। পরে সিংড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সন্ধ্যার পর নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান ও সিংড়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার জামিল আকতার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
মানিক লাল চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা যুগ যুগ ধরে আওয়ামী লীগ করি। গত উপজেলা নির্বাচনে আমরা নৌকার প্রার্থী শফিকুল ইসলামের পক্ষে ছিলাম। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বাদেশ আলীর পক্ষ নেন। এ ছাড়া গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইটালি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে আমরা ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেনের পক্ষে ভোট করি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক সদস্য আলিফ হোসেন। এসব কারণে ইটালি ইউপির চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম ও তাঁর সমর্থকেরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। তাঁরা যেকোনো বিষয়ে গ্রামে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করতেন।’
মানিক লাল অভিযোগ করে বলেন, গতকাল বিকেলে প্রতিপক্ষরা পরিকল্পিতভাবে ক্যাডার ভাড়া করে গ্রামে হামলা চালিয়েছেন। হামলার সময় তিনি ও তাঁর ভাই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল করে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ সময়মতো সাহায্য করেনি বলে তিনি দাবি করেন।
ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘প্রতিপক্ষরা আমার দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। আমি পালিয়ে জীবন বাঁচিয়েছি।’
তবে আলিফ হোসেন হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী গতকাল গ্রামে এলে তাঁদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে। এর জেরে কিছু ঘটনা ঘটতে পারে, তবে তিনি সেখানে ছিলেন না বলে দাবি করেন।
ইটালী ইউপির চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, সাবেক ও বর্তমান ইউপি সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। এ ঘটনায় আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে আমার বোধগম্য নয় ।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর-এ-আলম সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি জানার পরেই সেখানে গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশ সুপার মহোদয় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উভয় পক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছে, তবে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।