পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আব্দুল লতিফ” চল্লিশ বছর রিক্সা চালিয়ে ঘোচাতে পারেনি সংসারের অভাব।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আব্দুল লতিফ” চল্লিশ বছর রিক্সা চালিয়ে ঘোচাতে পারেনি সংসারের অভাব।

মোঃ হেমায়েত হোসেন খান
ডাসার মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের আবদুল লতিফ মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ,৪০ বছর রিক্সা চালিয়ে ঘোচাতে পারেনি তার সংসারের অভাব অনটন, আব্দুল লতিফের একমাত্র উপার্জনেই চলে তাহার সংসার, সাত মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। এর মধ্যে ছয় মেয়েকে অভাব অনটনের মধ্যেই কোনো মতে বিয়ে দিয়েছেন।

আব্দুল লতিফের সাত মেয়ে এক ছেলের মধ্যে একটি মেয়ে প্রতিবন্ধী এবং ছেলেটি সবার ছোট,তিনি মাদারীপুর শহরের আশপাশের এলাকায় রিকশা চালিয়ে তাহার পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য শেষ বয়সে এসেও তিনি তার জিবনের সাথে যুদ্ধকরছেন।

বর্তমানে তিনি বয়সের কারনে বেশি দূরের যাত্রী নিয়ে রিক্স চালাতে পারেন না, এবং ধীরগতি আর চোখে কম দেখার কারণে অনেকেই তার রিক্সায় ভাড়া নিতে চায়না।

আবদুল লতিফ বেপারী সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি। আগে শক্তি ছিল ভালো করে রিকশা চালাতে পারতাম। কিন্তু এখন নিজের চলতেই কষ্ট হয়। শরীরলে শক্তি ও নাই রিক্স চালিয়ে সারা দিন (তিন- শত- চার শত )-টাকা পাইলে,এই টাকায় আমার ঔষুধ কিনাই হয়না, সংসার চালাবো কিভাবে,সাত মেয়ের মধ্যে ছয়জনকে রিক্সা চালিয়ে বিয়ে দিয়েছি। এক মেয়ে প্রতিবন্ধী আর একটা ছেলে আজিজুল হাকিম বয়সে ছোট, চাইতো নিজে অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রতিদিনই নামতে হয় সংসার ও সন্তানদের আহার যোগাতে

তিনি আরও বলেন, অনেক সময় এক দিন রিক্সা চালালে পরের দিন অসুস্থতার কারনে পারিনা রিক্সা চালাতে সারা শরীরের বিভিন্ন স্থানের হাড্ডি ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে যায় কি করবো রিক্সা না চালিয়ে উপায় নাই বাড়িতে চাল ডাল না নিলে ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী না খেয়ে থাকবে।

তিনি আরো জানান,সন্ধ্যার পরে ঠিকমতো চোখে দেখি না। চশমাও ঠিকমতো কাজ করে না,শেষ বয়সে মানুষ বিশ্রাম করে ও নামাজ রোজা করে- নাতি-নাতিনদের নিয়ে আরাম আয়েশে দিন পার করে,তাই আমি বাংলাদেশ সরকার ও সমাজের ধনোবানদের সাহায্য কামনা করছি।

আবদুল লতিফ বেপারী আক্ষেপ করে বলেন, আমি বুড়ো বলে অনেকে আমার রিক্সায় চরতে চায় না,আবার অনেক যাত্রী বলে চাচা তারাতাড়ি চালাতে বলে, আমি জোরে চালাতে পারি না,অনেক যাত্রীই তখন রাগ করেন নেমে অন্য রিকশায় চলে যায়,তখন আমার অনেক কষ্ট লাগে। আমি তো সব যাত্রীকে তাড়াতাড়ি তাহার গন্তব্যে পৌঁছে দিতেই চাই, কিন্তু চাইলেও পারিনা।

অপর এক রিক্সা চালক বলেন, আমরা যুবক মানুষ, তাও ঠিকমতো রিক্সা চালাতে মাঝে মধ্যে অনেক কষ্ট হয়,চালাতে পারি না,আর লতিফ চাচাতো ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ, ওনি রিক্সা চালাতে গেলে হাত-পা কাঁপে,কেউ উঠতে চায় না তার রিকশায়। এক দিন চালাইলে তিন দিন চালাইতে পারে না। সরকার এবং ধনবান ব্যক্তি যদি তার পাশে থাকতো তাহলে সে বিশ্রাম পেতে পারতো।

আরেক রিক্সা চালক বলেন, সরকার তো অনেক লোককে অনেক কিছু দেয়। এই বৃদ্ধকে যদি একটি দোকান করে দেওয়া যেত তাহলে ছেলে-মেয়ে-স্ত্রীর মুখে দুই মুঠো খাবার দিতে পারতেন তিনি।

এই বয়সে তার পক্ষে রিক্সা চালানো কঠিন হচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, সরকার যেনো তাকে একটা স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দেয়।

বালিগ্রাম ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ফারুক চৌকিদার বাংলাদেশের আলো পত্রিকার ডাসার উপজেলা প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা তাকে অবশ্যই সাহায্য-সহযোগিতা করবো। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে যতটুকু সাহায্য-সহযোগিতা আসে, আমরা তাকে দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ

ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন ইয়াছমীন বলেন, এই বৃদ্ধার বিষয়ে প্রথম শুনলাম,তিনি যদি তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের কাছে এলে তাকে অবশ্যই সরকারের পক্ষ থেকে একটি কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *