দরবার শরীফে জমিদার, তালুকদার, মওলানা, মৌলভী এবং বড় বড় গণ্যমান্য মুরিদের সংখ্যাই ছিল অধিক। পীরের দরবারে অবস্থান কালেও তাঁহারা নিজেদের বিলাসিতা রক্ষা করিয়া চলিতেন। একদা সৈয়দ সাহেব তদীয় প্রিয়তম শিষ্য এনায়েতপুরী সাহেবকে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ ''ইউনুছ, বলোত পঁচিশ - ত্রিশ জন লোকের জন্য কয়টি মোরগ জবাই করা আবশ্যক হইতে পারে "? তিনি তদুত্তরে বলিলেনঃ পাঁচ কিংবা ছয়টি হইলেই যথেষ্ট হইবে। " ইহাতে ঐ সকল ধনবান লোকগণ ক্রোধে অধীর হইয়া উঠিলেন। কারণ, ইতঃপূর্ব্বেই ঐ সমস্ত লোকগণ বলিয়াছিলেন যে, ত্রিশ জন লোকের জন্য পঁচিশটী মোরগের কমে হইতে পারে না। হজরত সৈয়দ সাহেব তৎপর ক্রোধের ভাণ করিয়া তাঁহাদিগকে শুনাইয়া চল্লিশটী মোরগ জবেহ্ করিতে এনায়েতপুরী সাহেবকে আদেশ ফরমাইলেন। তৎপর তিনি তাহাই করিলেন। সন্ধ্যার সময় যখন তাহারা সকলে পোলাও ও মোরগের কোরমা আহার করিতে বসিয়া গেলেন তথায় এনায়েতপুরী সাহেবকে না দিখিয়া সৈয়দ সাহেব উতলা হইয়া পড়িলেন। তিনি মুরিদগণকে ফরমাইলেনঃ " ইউনুছ কোথায়? তাঁহাকে ডাকিয়া আন "। কিন্তু কেহই যখন তাহাকে অনুসন্ধান করিয়া পাইল না, তখন সৈয়দ সাহেব নিজেই তাঁহাকে খুঁজিতে লাগিলেন। পরে তিনি তাঁহাকে জীর্ণ বস্ত্রাবৃত অবস্থায় পার্শ্বের খড়ের নিচে দেখিতে পাইয়া সস্নেহে তাঁহার হস্ত ধারণ করিয়া তথা হইতে তাঁহাকে আনয়ন করিলেন। প্রেমিকের দরদ প্রেমাস্পদই জানেন। অন্য কেহ তা উপলব্ধি করিতে পারে না। হযরত সৈয়দ সাহেব যখন তাঁহাকে আহারের আদেশ ফরমাইলেন, তখন তিনি উপবিষ্ট হইয়া মাত্র কয়েক গ্রাস আহার করিয়া আদবের সহিত বসিয়া রহিলেন। পীর দরবারের আদর্শ - আদব যখন তাঁহার দ্বারা প্রদর্শিত হইল, তখন সকলেই বুঝিতে পারিলেন ইহা সবারই অনুকরণীয়। কারন, তাহারা বুঝিতে পারিলেন - পীরের দরবার আদবের স্থান, ভোগ - বিলাস ও সম্মানের স্থান নহে। কারণ, পীর দরবারে পার্থিব ধন, সম্মান, সম্পদের আশায় থাকিলে পারলৌকিক সম্পদ লাভ হইবে না। তাই পীর দরবারের শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হইবে।
ত্বথ্যসূত্র -:- (আদর্শ মুর্শিদ )