সত্যের খোঁজে আমরা
হয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সিনিয়র রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছিলেন যে এই তফসিল একটি প্রহসন। একতরফা নির্বাচন করে আবার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য সরকার টার অনুগত নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করছে। স্বভাবতই এই তফসিলের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, এটাই তাদের অবস্থান। তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে এমন এক সময়ে যখন বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকছে। এই হরতালের প্রথম দিনের অপরাহ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনের তফসিলের পর স্বাভাবিকভাবে বিএনপি নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ এবং বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনের ব্যাপারে নাটকীয় সিদ্ধান্ত নিতেও পারে। তবে সেক্ষেত্রে বিএনপির প্রধান শর্ত হবে এই তফসিল পেছানো। বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে দিনভর কথা বলে দেখা গেছে যে, তারা কিছু একটা অর্জন করতে চান এবং সরকারের কাছ থেকে কিছু একটা আদায় হয়েছে এটা দৃশ্যমান করতে চান। আর এই কারণেই সন্ধ্যায় ঘোষিত নির্বাচনের তফসিলের বিএনপি যে যাবে না এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
তবে এখন সকলে তাকিয়ে আছে কূটনীতিক তৎপরতার দিকে। কূটনীতিক মহল শেষপর্যন্ত তাদের ভাষায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অর্থাৎ যে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে সে রকম একটি নির্বাচন আয়োজনের জন্য কি ধরনের তৎপরতা গ্রহণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো নিশ্চিতভাবেই চাইবে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক এবং এজন্য তারা তাদের তৎপরতা আরও দৃশ্যমান করবে। এখন দেখার বিষয় যে বিএনপিকে কতোটুকু ছাড় সরকার দিতে পারে এবং কোন কোন শর্তের বিনিময়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আনা যেতে পারে।
তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে বিএনপিকে নির্বাচনে আনা বা না আনা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব না। এটা বিএনপির একান্তই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসবে, কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসবে না সেটা তাদের তাদের দলীয় ব্যাপার। এখানে আওয়ামী লীগ বা অন্য কারও কোনো কিছু করার নেই। আওয়ামী লীগ এখন একটা ব্যাপারে খুবই অবিচল থাকবে, অটল থাকবে তা হল যে নির্বাচনের তফসিল যেন কোনও ভাবেই পিছানো না হয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা আজ বলেছেন যে নির্বাচন কমিশন যে তফসিল করবে সেখান থেকে পিছিয়ে আসার কোনও উপায় নেই।
অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন যে, এখন হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নতুন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং সমঝোতার চেষ্টার জন্য চেষ্টা করবে। সমঝোতার চেষ্টার প্রথম শর্ত হতে পারে নির্বাচনের তফসিল টাকে পুনঃনির্ধারণ করা, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান তৈরি করা। কিন্তু সেই ফাঁদে আওয়ামী লীগ পা দেবে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন যে এখন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে দেশ প্রবেশ করেছে। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা এবং শূন্য আসনগুলোতে নির্বাচনের পরে যদি কোনও আসনে গোলযোগ হয়, সংঘাত হয়, সেখানে পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, গেজেট প্রকাশ করা, সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়া এবং একটি নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। তাই নির্বাচনের তফসিল পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। এখন দেখার বিষয় যে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য কে কী করবে?
তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল মহলগুলো বলছে যে, আওয়ামী লীগ এখন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আগ্রহী নয়। বিএনপি যদি নিজেদের রাজনৈতিক কৌশলে নির্বাচনে আসতে চায় সেটা ভিন্ন ব্যাপার। এখন বিএনপি তার রাজনৈতিক কৌশল বিবেচনা করে নির্বাচনে আসবে কি না সেটাই দেখার বিষয়।