ড. বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের
একজন সদ্য সাবেক কর্মকর্তা, যিনি বাংলাদেশ পুলিশের ৩০তম মহাপরিদর্শক হিসেবে আজ ৩০
সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রি. তাঁর দীর্ঘ ৩৪ বছরেরও বেশী চাকুরি জীবন শেষে স্বাভাবিক অবসরে গেলেন। তিনি ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের আজ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. বেনজীর আহমেদ ১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর গোপালগঞ্জ জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজ, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা চার্লস স্ট্রার্ট ইউনিভার্সিটি ও সিঙ্গাপুরে বিশ্বব্যাংকের আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পড়াশোনা করেন ড. বেনজীর আহমেদ। ২০১৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
আইজিপি হিসেবে যোগদানের পর ড. বেনজীর আহমেদের হাত ধরে পুলিশে বেশকিছু সংস্কার এসেছে। যোগ হয়েছে নতুন নতুন বিষয়, আধুনিক হয়ে উঠেছে পুলিশ বাহিনী। তার নতুন নতুন উদ্যোগের কারণে পুলিশ বাহিনী হয়ে ওঠে জনবান্ধব। ‘বিট পুলিশিং’ কার্যক্রম চালু করেন তিনি। এতে থানায় না গিয়ে ঘরে বসে পুলিশের সেবা পাচ্ছে মানুষ, কমেছে ভোগান্তি। পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাও বেড়েছে।
২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার বেনজীর আহমেদকে দেশের ৩০তম পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়। এরপর থেকে তার নানা পদক্ষেপের কারণে ‘জনমুখী পুলিশি সেবা’ পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। থানা থেকে বের করে পুলিশকে মানুষের দোরগোড়ায় নিতে একের পর এক সাহসী ও সময়োপযোগী নির্দেশনাও দিয়ে গেছেন তিনি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় মানুষের পাশে থেকে সেবা দেওয়া, জঙ্গি ও মাদক নির্মূলে প্রতিনিয়ত অভিযানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বেনজীর আহমেদকে র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি দায়িত্ব বুঝে নিয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে ভূমিকা পালন করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান তিনি। হলি আর্টিসান হামলায় প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং পরে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানও বেগবান রেখেছেন তিনি।
সুন্দরবনের জলদস্যুতার অবসান ঘটিয়ে একটি স্বস্তির উপকূলীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রেখেছেন ড. বেনজীর আহমেদ। এছাড়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান তার সাফল্যের মুকুটে আরও একটি উজ্জ্বল পালক।
১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সপ্তম বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন।
পরবর্তীতে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার এসপি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীন ডিসি (ঢাকা উত্তর), পুলিশ একাডেমির প্রধান প্রশিক্ষক (সি আই), পুলিশ সদর দফতরে এআইজি (প্রশাসন), ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশনস), ডিআইজি (ফিন্যান্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি টাঙ্গাইল পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কম্যান্ড্যান্ট (ডিআইজি) এবং পুলিশ সদরদপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি বসনিয়া ও কসভোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও কর্মরত ছিলেন। তিনি নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘চিফ মিশন ম্যানেজমেন্ট এন্ড সাপোর্ট সার্ভিসেস’ হিসেবে এক বছর কাজ করেন। তিনি ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। এর পূর্বে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ পুলিশে অত্যন্ত দূরদর্শিতা ও দক্ষতা প্রদর্শন এবং সাহসী ভূমিকার জন্য তিনি ২০১১, ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) অর্জন করেন।
আজ বিদায় বেলায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এর পক্ষ থেকে মাননীয় বিদায়ী আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এঁর প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ তাঁর মুখ নিঃসৃত ৫ দফা নির্দেশনা – “পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত হওয়া, মানুষকে নির্যাতন করা থেকে বেরিয়ে আসা, মাদকের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, সারা দেশে বিট পুলিশিং চালু করা ও কর্মরত অবস্থাতেই পুলিশের কল্যাণ নিশ্চিত করা” সর্বদা প্রতিপালনে অঙ্গিকারাবদ্ধ থাকবে।