ভাগ্য বদলের এক মাইলফলক মহাইমিনের মাশরুম চাষ।

ভাগ্য বদলের এক মাইলফলক মহাইমিনের মাশরুম চাষ।

মোঃ কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি

জীবনের ভাগ্য বদলের এক মাইলফলক স্থাপন করেছেন মাগুরা সদর মঘী ইউনিয়নের বড়খড়ি গ্রামের মহাইমিন আলম। তার মাশরুম চাষের বিষয়ে জানতে গিয়ে দেখা যায়, ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে প্রবল মানসিক শক্তির সমন্বয় ঘটলে অসীম প্রতিকূলতাও যে

হার মানে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ তৈরি করেছেন তিনি। সরেজমিনে জানা যায়, ২০১৮ সালে নিজ বাড়ির ছোট্ট একটি ঘরে মাত্র ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করেন মাশরুম চাষ। পরিবারের সহযোগিতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের পথ পেরিয়ে ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে। প্রথম বছরে লাভ করেন এক লাখ টাকা। এখন প্রতি মাসে মহাইমিনের আয় ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। এতে শুধু সে স্বাবলম্বীই হয়নি পরিবারেও ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা। এলাকার অনেক ক্ষুদ্র উদোক্তাদের অনুপ্রেরণা এখন মহাইমিন? আলম। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তিনি পড়াশোনা করতেন এবং পাশাপাশি পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে আর পড়াশোনা করতে পারিনি। বাবা-মা পারিবারিকভাবে বাবা কৃষি কাজ করতেন। ২০১৮ সালে বাড়ির পাশে মাশরুম উদ্যোক্তা বাবুল আক্তারের কাছ থেকে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের সঞ্চয়ের টাকা ও ধারদেনা করে ১০০০ স্পন দিয়ে ছোট্ট একটি ঘরে শুরু করি মাশরুম চাষ। দুই মাসের ব্যবধানে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করে শুরু হয় আমার স্বপ্নযাত্রা। ৬ বছরের। ব্যবধানে আমার এখন ২৫ হাজার স্পনে মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হয়। সাংসারিক সকল ব্যয় মিটিয়েও এখন আমার মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা সঞ্চয় থাকে। আমার সাফল্য দেখে এখন অনেকেই আমার কাছ থেকে মাশরুম চাষের কৌশল শিখতে আসছেন। ইতোমধ্যে আমার কাছ থেকে শিখে ৮ থেকে ১০ জন মাশরুম চাষ শুরু করেছেন। আমার আশা আছে আগামীতে আমি একটি মাশরুম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে এলাকার বিশেষ করে পুরুষ ও নারীদেরকে উদ্যোক্ত হিসেবে গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ। আমার প্রথম উৎপাদিত মাশরুম এলাকায় অল্প পরিমাণ বিক্রি হত ও অনেক বাধা সৃষ্টি হয়েছে। পরে অনলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-ঢাকা-খুলনা সাভার, সিলেটসহ সারাদেশেই বিক্রি করছি। মহাইমিনের পিতা মো. দিদারুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিকে মাশরুম নিয়ে আমার খুব একটা আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন দেখলাম মাশরুম বেশ লাভজনক তখন থেকে ব্যবসার ফাঁকে ফাঁকে ছেলেকে সময় দিতে শুরু করলাম। এখন ছেলে আয়সহ আমার আয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চালিয়ে আমাদের সঞ্চয় হচ্ছে। আমাদের এলাকায় মাশরুমের খুব একটা চাহিদা না থাকলেও অনলাইনের মাধ্যমে আমাদের সকল মাশরুমই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। মাগুরা সদর মঘী ইউনিয়নের নতুন উদ্যোক্তা তিনি বলেন, মহাইমিন আলমের মাশরুম চাষ দেখে তার কাছ থেকে শিখে ও পরামর্শ নিয়ে গত বছর আমি ছোট্ট একটি ঘরে এক স্পনে মাশরুম চাষ শুরু করি। এখন আমি ২০০ স্পনে মাশরুম চাষ করছি। মাসে আমার ৪-৫ হাজার টাকা ইনকাম হচ্ছে। আশা করছি আগামী বছর এক হাজার স্পনে মাশরুম চাষ করব। মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, মহাইমিনের আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছি। তার এ সাফল্য দেখে এখন এলাকার অনেক নারীরাই মাশরুম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। নতুন উদ্যোক্তাদের বিশেষ করে নারীদের প্রাধান্য দিয়ে মহাইমিন আলম নিয়মিত মাশরুম চাষের কলা-কৌশল প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি মহাইমিন আলম সফলতার হাত ধরে ও পরামর্শ নিয়ে অনেক নারী-পুরুষও স্বাবলম্বী হয়ে কৃষি অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *