সত্যের খোঁজে আমরা
পাকিস্তান। অন্য ম্যাচগুলো যতই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক না কেন, সারা বিশ্বের ক্রিকেট ভক্তদে চোখ থাকে ঐ একটি ম্যাচের দিকেই। অধীর আগ্রহে তারা ঐ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে। স্টেডিয়াম তো বটেই, টেলিভিশনে লাখ লাখ চোখ খুঁজে ফিরে প্রিয় তারকাদের। জয়ী দলের মধ্যে যেমন অন্যরকম এক স্বস্তি দেখা যায়, তেমনি পরাজিত দলটি যেকোন ভাবেই অভিযোগের তীর ছুঁড়ে দেয়। যদিও এই অভিজ্ঞতা এখন পর্যন্ত চির প্রতিদ্বন্দ্বি দুই দলের মধ্যে ভারতই বেশী উপভোগ করেছে। কারণ ১৯৯২ সালে সিডনিতে প্রথমবারের মত মুখোমুখি হবার পর বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত সাতবারের মোকাবেলায় একবারও জিততে পারেনি পাকিস্তান। শনিবার আহমেদাবাদে বাবর আজমের দল অন্তত এই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। এটা কি ভাগ্য? সাত টসের মধ্যে ভারত পাঁচবারই জয়ী হয়ে বাড়তি কোন সুবিধা পেয়েছে কিনা? পাকিস্তান কি চাপের মধ্যে ভারতের চেয়ে বেশী ভেঙ্গে পড়ে? এই প্রশ্নগুলো প্রতিবারই উঠে আসে। পাকিস্তানী কিংবদন্তী ওয়াসিম আকরাম বলেছেন, ‘বিশ্বকাপে আমরা এ পর্যন্ত সাতটি ম্যাচ খেলেছি এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশ প্রতিদিন, প্রতি সেকেন্ডে এই ৭-০ ব্যবধান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। সত্যি বলতে কি, এই পরাজয়ের কোন একটি বিশেষ কারণ এখনো আমি বের করতে পারিনি।’ ভারতের কাছে চারবার পরাজিত দলের অন্যতম সদস্য ইনজামাম-উল-হক বিশ্বাস করেন চাপ একটি অন্যতম বড় কারন। তিনি বলেন, ‘হতে পারে চাপ সামলে ওঠার ব্যপারে ভারত আমাদের থেকে এগিয়ে ছিল। তাছাড়া টস জয়ের ব্যপারেও তারা সুবিধা পেয়েছে।’ যদিও পাকিস্তান দুটি ম্যাচে টসে জিতেও ভাগ্য ফেরাতে পারেনি। ২০০৩ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নে শচীন টেন্ডুলকার ও ২০১৯ সালে ম্যানচেস্টারে রোহিত শর্মার ব্যাটিংয়ের কাছে পাকিস্তানকে হার মানতে হয়। এই দুটি ম্যাচে টসে জিতে পাকিস্তান ভারতকে প্রথম ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তবে ২০১৯ সালের ম্যাচটিতে হারের জন্য অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের বাজে কিছু সিদ্ধান্তকে দায়ী করা হয়। টুর্নামেন্টের ফরমেট অনুযায়ী পাকিস্তান ও ভারত প্রথম চার বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়নি। ১৯৮৭ সালে যৌথ আয়োজক হিসেবে তাদের সামনে সুযোগ ছিল প্রথমবারের মত ফাইনালে মুখোমুখি হবার। কিন্তু উভয় দলই নিজ নিজ সেমিফাইনাল ম্যাচে পরাজিত হয়েছিল। ১৯৯২ সালে সিডনিতে প্রথমবারের মত চির প্রতিদ্বন্দ্বি দল দু’টি মুখোমুখি হয়। লো স্কোরিং ম্যাচটিতে পাকিস্তান ২১৭ রানে তাড়া করতে গিয়ে ৪৩ রানে পরাজিত হয়েছিল। জাভেদ মিঁয়াদাদের ব্যাট হাতে লাফ দেয়া ও ভারতীয় অধিনায়ক কিরন মোরেকে নকল করে দেখানোর জন্য ম্যাচটি এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে। যদিও ঐ পরাজয় ভুলে ইমরান খানের দল প্রথমবারের মত ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুরেছিল। চার বছর পর ভারতের মাটিতে ব্যাঙ্গালোরে পাকিস্তান ৩৯ রানে পরাজিত হয়। এই পরাজয়ের পর পাকিস্তানে ফিরে ব্যপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল পুরো দলকে। এমনকি অধিনায়ক ওয়াসিম আকরামের বিপক্ষে ইনজুরি নিয়ে প্রতারণা করারও অভিযোগ উঠেছিল। সেই স্মৃতি সামনে এনে ওয়াসিম বলেন, ‘কেউই ঐ পরাজয়টা মেনে নিতে পারেনি। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আমাদের বাড়ি ফিরতে হয়েছে। বেশ কয়েকদিন আমরা কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারিনি।’ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে ৪৭ রানে ও পরবর্তীতে বাংলাদেশের কাছে হতাশাজনক পরাজয়ের পর ওয়াসিম আকরামের দলের বিপক্ষে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগও উঠেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আসরে পাকিস্তান রানার্স-আপ হয়ে কিছুটা মান রক্ষা করে। ২০০৩ বিশ্বকাপে ওয়াসিম আকরাম ওয়াকার ইউনুস ও শোয়েব আখতারকে নিয়ে সাজানো দুর্দান্ত পেস আক্রমণ নিয়ে পাকিস্তান ৬ উইকেটে ভারতের কাছে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়। ২০১১ সালে মোহালিতে হাই ভোল্টেজ সেমিফাইনালে ভারত ২৯ রানে জয়ী হয়েছিল। ম্যাচটি মাঠে বসে উপভোগ করেছেন ভারত ও পাকিস্তানের তৎকালীন দুই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও ইউসুফ রাজা জিলানি। ২০১১ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি বলেছেন, ‘সত্যি বলতে সবসময় আমরা কেন পরাজিত হই তার কোন কারণ আমার জানা নেই। সেমিফাইনালে পৌঁছানোর আগে আমরা দারুন খেলেছি। কিন্তু মোহালিতে গিয়ে পরজয় বরণ করতে হয়েছে। ঐ সময় আমাকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু একজন অধিনায়ক হিসেবে আমি খেলোয়াড়দের বলেছিলাম তাদের সেরাটা দিতে।’ ২০১৫ বিশ্বকাপে এডিলেডে বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে বারত ৭৬ রানে জয়ী হয়। ২০১৯ সালে ম্যানচেস্টারে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে আবারো পাকিস্তান ৮৩ রানের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। শনিবার আহমেদাবাদে এই পরিসংখ্যান কি ৮-০ হবে নাকি ৭-১’এ নিয়ে স্বস্তি ফেরাবে পাকিস্তান শিবিরে, তা সময়ই বলে দিবে। যদিও আশাবাদী ওয়াসিম বলেছেন, ‘এই খরা একদিন কাটবেই। বর্তমান দলটিকে নিয়ে আমি আশাবাদী। তাদের মধ্যে সব ধরনের ক্ষমতা আছে। পাঁচ পরাজয়ের পর ২০২১ সালে দুবাইয়ে আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পরাজয়ের খরা কাটিয়েছিলাম। এখন ৫০ ওভারের ম্যাচে নিজেদের ফিরিয়ে আনার অপেক্ষা।’