২০২০ সালের জানুয়ারিতে জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর যাঁরা উল্লাস করেছিলেন, তাঁদের কাছে ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর বেশ বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
এ রকম অনেকে এখন বলছেন, হামাসের ‘আল-আকসা ফ্লাডে’র পর মধ্যপ্রাচ্য আর আগের মতো থাকবে না। দিনটি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতি আমূল বদলে দেবে। সত্যতা আছে এ কথায়।
বাস্তবতা হলো ইসরায়েল নয়, মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দিচ্ছেন ইরানি সমরবিদেরা। গাজাযুদ্ধ সে রকম এক সমরবিদ হাসান তেহরানি মোগাহ্দ্দামের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
এটা প্রায় সবার জানা, বহুকাল ফিলিস্তিনি তরুণদের প্রতিরোধ অস্ত্র ছিল পাথর বা ইটের টুকরা। হাসান তেহরানির অবদান এটুকু, ওই তরুণদের হাতে ইটের টুকরার বদলে রকেট প্রযুক্তি ধরিয়ে দিয়েছেন।
‘আল-আকসা ফ্লাড’ অভিযানের প্রথম দুই সপ্তাহে হামাস প্রায় ৫ হাজার রকেট ছুড়েছে। অভিযানে দূরপাল্লার মিসাইলও ব্যবহার হচ্ছে। রকেট ও মিসাইল সামলাতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ মজবুত। কিন্তু হামাসের সব মিসাইল ও রকেট তারা থামাতে পেরেছে এমন নয়। তাদের আহত-নিহত নাগরিকদের সংখ্যা জানাচ্ছে দেশটির মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ততটা সফল নয়—যতটা প্রচারিত।
যুদ্ধে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রায় দেড় হাজার মানুষ মারা গেছেন। সংখ্যাটা নিহত গাজাবাসীর তুলনায় অনেক কম। কিন্তু ওয়াশিংটন ও তেল আবিবের জন্য সংখ্যাটা বিব্রতকর।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এত দিন ধারণা দেওয়া হয়েছিল ইসরায়েলের আকাশ অজেয়। যুদ্ধে তারা কেবল মারতে শিখেছে। হামাস নয়, এই মিথ ধ্বংস করেছেন আসলে একজন শিল্প প্রকৌশলী। মোটর অপারেটর হিসেবে শুরু করেছিলেন দেশসেবা। এখন ইরানের ‘মিসাইল প্রযুক্তির জনক’ বলা হয় তাঁকে। জীবিতকালে হাসান তেহরানি একজন শৌখিন পর্বত আরোহীও ছিলেন। এই শৌখিনতার মাঝে তাঁর পেশাগত বৈশিষ্ট্যের প্রায় পুরোটা খুঁজে পাওয়া যায়।
৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের নাগরিকেরা বিশ্বাস করতে শিখেছেন আগের মতো আর তাঁরা নিরাপদ নন। ইরানের একজন প্রযুক্তিবিদ তাঁদের নিরাপত্তা ছিনতাই করে নিয়ে গেছেন। এমনকি ১৭ জন (অনানুষ্ঠানিক সূত্রে ৩৮ জন) সহযোগীসহ তাঁকে হত্যার পরও অবস্থার অবনতি থামানো যায়নি।
ইসরায়েলের নেতারা দশকের পর দশক আরব শাসকগোষ্ঠী ও আমেরিকার বন্ধুত্বের ওপর ভরসা করে ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার অগ্রাহ্য করে গেছে। তারা ধারণা করতে পারেনি প্রযুক্তি জ্ঞান শিগগিরই তাদের কৌশলকে আত্মঘাতী প্রমাণ করতে চলেছে।