দিনমজুর বাবার চার সন্তানের বৃহৎ পরিবারের রোজকার বাজার করতে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা। ছেলে আপন(১৬) অটোরিক্সা ভাড়া নিয়ে যে রোজগার করতো তা নিয়েই স্বপ্ন দেখেছিলেন কিছুটা স্বস্তির। কিন্তু সে স্বস্তি যে এত সস্তায় শেষ হয়ে যাবে তা ভাবতেও পারেননি স্বপ্নে। ২৬ এপ্রিল, ২০২২ তারিখ সকালে যখন ছেলের লাশ পাওয়ার খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে, তখন পরিবারসহ আকাশ বাতাস ভারী করেছিলেন আহাজারিতে।
ঘটনা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার। ছেলে খুনের বিচার চেয়ে সেদিনই মামলা করেন বাবা। পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ জনাব মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, পিপিএম(বার) এর নির্দেশে ‘ক’ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ নাজমুল হাসান একটি চৌকস টিম নিয়ে শুরু করেন খুনিদের সন্ধান। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা আর বিভিন্ন সের্সের দেয়া তথ্যের বিশ্লেষণে ছুটে যান কুমিল্লা জেলার হোমনা থানা এলাকায়। আটক করেন প্রকৃত খুনি ভিকটিমের বন্ধু নাহিদ(২১) ও আমিন(২৩) কে। উদ্ধার করেন ভিকটিমের অটোরিক্সাসহ বিক্রি করা ১১৬০০ টাকা। একইসাথে উদ্ধার হয় হত্যার কাজে ব্যবহৃত গলায় ফাঁস দেয়া রশি। অটোরিক্সা চোরাকারবারিদের তিনজনকেও আটক করা হয়। বিজ্ঞ আদালতে ২৮ এপ্রিল ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মতে স্বীকোরোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আসামি নাহিদ ও আমিন।
খুনের গল্পের শুরুটা অন্যরকম। নাহিদ ও আপন ছিল পরস্পর বন্ধু। কিন্তু একসময় প্রকাশ পায় দু’জনই ভালোবাসে একটি মেয়েকে। বিষয়টি জানার পর শুরু হয় মনোযুদ্ধ। এর পালে হাওয়া লাগায় অপর বন্ধু অটোরিক্সা ছিনতাকারী আমিন। সে নাহিদকে প্ররোচণা দিয়ে আপনকে খুন করে তার অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা চুড়ান্ত করে। ২৫ এপ্রিল, ২০২২ তারিখ রাতে নাহিদ ও আমিন ঘোরার কথা বলে আপনকে অটোরিক্সাসহ ডেকে নেয়। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করিয়ে নির্মমভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করে আপনকে। নাহিদ তার প্রেমিকার সাথে প্রেম করার প্রতিশোধ নেয় আপনের গোপনাঙ্গে চরম আঘাত করে। তুচ্ছ ঘটনায় নির্মমভাবে জীবন দিতে হয় আপনকে। এ যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। অটোরিক্সা চোরাকারবারিদের হাতে মাত্র ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় নিহত আপনের অটোরিক্সাটি। তবে নগদ হাতে পায় তারা ২০ হাজার টাকা।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব মোঃ আজিজুল হক ও তদন্তকারী অফিসার এসআই নুর আলম এবং অন্যান্য সহযোগী অফিসার ফোর্সের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধায় ঘটনার মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জড়িত মূল ২ আসামি গ্রেফতার, ভিকটিমের অটোরিক্সা, বিক্রি করা অটোরিক্সার ১১৬০০ টাকা ও হত্যার কাজে ব্যবহৃত রশি উদ্ধারসহ অটোরিক্সা চোরাকারবারি দলের তিন সদস্য ইসমাইল, বিল্লাল ও সাইদুরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় অভিযানিক দল। আপন আর কখনো তার আপনজনদের নিকট ফিরে আসবেনা। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের চৌকস দল আপন হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে এগিয়েছে অনেকটা দূর্গম পথ। এ পথ পাড়ি দিতে যারা করেছে অক্লান্ত পরিশ্রম তাঁদের প্রতি জেলা পুলিশ এবং ভুক্তভোগী পরিবারের অশেষ কৃতজ্ঞতা।