গানের পাখি রোমানা মোর্শেদ কনক কি মিষ্টি কন্ঠ, মন মাতানো সুর আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন।!যার মিষ্টি কন্ঠে

গানের পাখি রোমানা মোর্শেদ কনক কি মিষ্টি কন্ঠ, মন মাতানো সুর আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন।!যার মিষ্টি কন্ঠে

পাগল হয়েছিলো লক্ষ- কোটি শ্রোতা। শুধু এই সময়ের ফলোয়ার ই নয়, ওই সময়ের ও ফলোয়ার ছিলাম। তখন ২০০৬/২০০৭ সালের কথা, জনপ্রিয় উপস্থাপক জনাব মাজহারুল ইসলাম রেডিও তে ছায়াছবির গানের অনুষ্ঠান করতো।
তখন কার রেডিও তে গান মানেই এন্ড্রু কিশোর, কনক চাঁপা উপস্থাপকের মুখে লেগেই থাকতো। এই অনুষ্টান রেডিও তে শোনার জন্য হাফ স্কুল করে ১টায় স্কুল পালিয়ে বাড়ি চলে আসতাম। তখন আমি ছোট। সম্ভবত ক্লাস ৫ম শ্রেনীতে পড়ি। বেতারে তখন সকাল ৯.০০-১০.০০ টা অনুরোধের গানের আসর নামক অনুষ্ঠান হত।চিঠির মাধ্যমে সবাই অনেকের পছন্দের গানের অনুরোধ করতো। আমার ও খুব ইচ্ছা হলো বেতারে চিঠি লিখবো। কনক চাঁপার গান অনুরোধ করবো। আমার তো দেরি সইছে না।বাইসাইকেল চালিয়ে ৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে গোয়ালপাড়া নামক বাজার থেকে চিঠির খাম কিনে আনি। চিঠিলিখা শুরু করি নিয়মিত। প্রথম কনক চাঁপার গানের অনুরোধ আমার আজ ও মনে আছে সেই আনান্দ অশ্রু ছায়াছবির কালজয়ীগান “তুমি আমার এমন ই একজন”। কি অসাধারণ ভাবে গেয়েছেন! চিঠিতে ৫-৭ বাসার ও পরিচিতি জনের নাম দিয়েছিলাম। আমি স্কুলে চলে গেছি,এসে অনেকের মুখেই শুনলাম আমার চিঠি বেতারে পড়েছে। শুনে মন টা খুশিতে ভরে গেলো। বেতারে জীবনের প্রথম চিঠি প্রচার হলো, শুধু তাই নয় অনুরোধের গানটাও শুনিয়েছিলো।
এর পর থেকে নিয়মিত চিঠি লিখে আপনার গানের অনুরোধ করতাম। রাতে পড়তে বসতাম। আমরা ৪ ভাই বোন রাতেও ১০টা এবং রাত ২ টা তে ছায়াছবির গানের অনুষ্ঠান হত। তখন ছোট একটা মাত্র রেডিও ছিলো বাড়িতে বাট সবাই গান শোনার জন্য যার যার দখলে রেডিও রাখতে চাইতো,মাঝে মাঝে ঝগড়া ও হত,মান অভিমান ও চলতো। এ কারনে আমি রাতে পড়তাম আর ২ টার গান শুনতে ২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম। সবাই তখন ঘুমিয়ে পড়তো। আমি রেডিও টা বিছানার পাশে রেখে দিতাম।
কনক চাঁপার সাথে আরেকজন শিল্পী আমার ঝিনাইদহ জেলার খুব পছন্দ ছিলো। তিনি আর কেউ নন, কন্ঠ শিল্পি মনির খান।
আপনাদের কন্ঠে “প্রেমের তাজ মহল” গানটা ভিষণ ভালো লাগতো এবং তখন কার সময় জনপ্রিয় গান ছিলো সম্ভবত চলচিত্রের সেরা গানের পুরুস্কার ও পেয়েছিলেন।বিকেলে খেলার মাঠেও রেডিও নিয়ে যেতাম ছায়াছবি মানেই তখন কনক চাঁপার গান। তখন সিডির ডিস্ক পাওয়া যেতো। বেষ্ট অফ কনক চাঁপা নামে ডিস্ক কিনেছিলাম। গান গুলো এখনো শৈশবের দিন গুলো মনে করিয়ে দেয়।
“আমি মেলা থেকে তাল পাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি। সুরের মুর্ছনা আর শিল্প নৈপূন্যের অপূর্ব সমন্বয় এ যেন এক শৈশবের জীনন্ত উদাহরন। কি দারুন শৈশব কেটেছে আপনার গান শুনে! চারদিকে সেই মাতানো সুর বাজতো “বাজারে যাচায় করে দেখিনি তো দাম, প্রেমের তাজ মহল,কিছু কিছু মানুষের জীবনে, এক বিন্দু ভালো বাসা দাও, খালিদ হাসান মিলুর সাথে ” যে প্রেম স্বর্গ হতে, সাথী তুমি আমার জীবনে, অনেক সাধনার পরে এর মত সাড়া জাগানো গানগুলো। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে কি মধুর কন্ঠ দান করেছেন! অপুর্ব তার সুরের ঝংকার। কত ক্লান্ত পথিক বট বৃক্ষের ছায়ায় বসে আপনার গান শুনে মন জুড়িয়েছে তার কোন ইয়াত্তা নেই।দক্ষিণা বাতাশে গা এলিয়ে দিয়ে আপনার মিষ্টি সুরে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেছে। শুধু ঘুমিয়ে যায়নি আপনার জীবন্ত কন্ঠ।গেয়েছেন অসংখ্য গান।। যাকে এক কথায় বলা যায় জীবন্ত কিংবদন্তি। আজ ও সমান ভাবে গেয়ে যাচ্ছেন আমাদের জন্য। এখনকার সস্তা গান আর তখনকার গানের বিস্তার ব্যবধান। আপনার জন্ম, বেড়ে ওঠা,একজন গুনী মানুষের সাথেই।যার সংস্পর্শে আপনার মত মহান শিল্পীর আগমন।
আগের গানের কথা সুর ও সুরে একটা মাধুর্য ছিলো, যার ভেতর শিল্প নৈপূন্য নিহিত ছিলো। বুঝায় যেত এখানে কতটা শ্রম, অধ্যবসায়, ধর্য, এককগ্রতা দিয়ে আগের সেই সোনালী দিনের শিল্প কে আপনারা টিকিয়ে রেখেছিলেন। ইচ্ছা হয় ৯০ দশকের আবার সেই সোনালী দিন গুলো ফিরে আসুক। চলচিত্র, সংগীত অঙ্গন আবার সোনালী দিন ফিরে পাক। আপনার মত গুনী শিল্পীর মর্যাদা চিরকাল ই রয়ে যাবে। বেচে রবেন চিরকাল লক্ষ কোটি ভক্তের রিদয়ে।
অনেক অনেক শুভ কামনা ম্যাম আপনার জন্য।
রুবেল হোসেন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *