রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখন নিজেই রোগী

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখন নিজেই রোগী

মাটি মামুনঃ

উত্তরাঞ্চলে ৮ জেলার মানুষের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিভাগসহ পুরো হাসপাতালটি নানা সমস্যায় জর্জরিত।
কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে কিডনি বিভাগের ডায়ালাইজার মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে ডায়ালাইসিস বন্ধ থাকায় মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন কিডনী রোগীরা।

তাছাড়া এই বিভাগের অন্যান্য মেশিন ও যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
এমন অবস্থায় পুরো হাসপাতালটি এখন রোগাক্রান্ত। হাসপাতালে প্রতিনিয়ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
কিন্তু রোগী বাড়লেও দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের পুরনো মেশিনগুলো মেরামত কিংবা আধুনিকায়নের কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত না রহওয়ায় তারা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন।
হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গেছে, রংপুর মেডিকেলে কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য ২৫টি ডায়ালাইজার মেশিন থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ১৩টি মেশিন পুরোপুরি বিকল হয়ে আছে।
বাকি ১২টি মেশিন দিয়ে কার্যক্রম চালানো হলেও মাঝে মধ্যে সেগুলোর কয়েকটি বিকল হয়ে যায়।
দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নামেই আছে।
এ দু’টি কোনো কাজ করছে না। এতে করে অনেককেই বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
রোগীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, একজন কিডনি রোগীকে সপ্তাহে দুবার করে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। অধিকাংশ মেশিন নষ্ট থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। বিশেষ করে পাশ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে আসা রোগীদের ক্ষেত্রে অধিকাংশই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ডায়ালাইসিস ছাড়াই ফিরে যেতে হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর যদিও সিরিয়াল পাওয়া যায় তাহলে ৪ ঘণ্টার ডায়ালাইসিস শেষ করতে হয় দুই-আড়াই ঘণ্টায়।
সঠিক সময়ে ডায়ালাইসিস করতে না পারায় অনেকেই মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন ডাক্তার জানিয়েছেন, ২০১২ সালে ১৫টি মেশিন নিয়ে হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিটটি চালু হয়।
রোগীর চাপের কারণে ২০১৭ সালে আরও ১০টি মেশিন সংযোজন করা হয়।
বেশ কিছুদিন ধরে ২৫টি মেশিনের মধ্যে ১৩টি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে।
বাকি ১২টি মেশিন সচল থাকলেও তা পুরোপুরি কার্যকর নয়। সামান্য ত্রুটিতেই তা বন্ধ হয়ে পড়ে।
মেশিনগুলো মেরামত কিংবা সার্ভিসিং করার জন্য কোনো অভিজ্ঞ লোক নেই। তাদের আনতে হলে ঢাকায় চিঠি লিখতে হয়। তারা এসে মেরামত করতে করতে চার-পাঁচ দিন সময় লাগে। এতে রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালে কেনা মেশিনগুলোর ওয়ারেন্টি ছিল এক থেকে দুই বছর। সেই মেশিন দিয়ে চলছে ৯ বছর। স্বভাবতই এসব মেশিন এখন অকার্যকর। এছাড়া সামান্য ত্রুটিজনিত কারণে নষ্ট মেশিনগুলো ঠিক করার জন্য যদি সার্বক্ষণিক লোক থাকত তাহলে ডায়ালাইসিস কার্যক্রম এতটা বিঘ্নিত হতো না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *