জনপ্রিয়। এ পান এখন দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে যাচ্ছে বিদেশে। এ কারণে কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে পান চাষ।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ অর্থব ছরে ২ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে পান চাষ হয়েছিল ২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলায় ২ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জেলার মধ্যে মিরপুর উপজেলা থেকে সবচেয়ে বেশি পান রফতানি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে মিরপুর উপজেলা থেকে ২০ টন পান লন্ডনসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রফতানি হয়েছে। কুষ্টিয়া সদর থেকে একই সময়ে ২২ টন ও ভেড়ামারা উপজেলা থেকে ২৭ টন পান রফতানি হয়েছে। জেলার তিনটি উপজেলা থেকে বছরে গড়ে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার পান রফতানি হচ্ছে।
গত তিন অর্থবছরে পান চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন জেলার কৃষক। ফলে অনেক চাষি আবারও ঝুঁকছেন পান চাষে। অন্যদিকে বর্তমানে পান চাষে জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহার হওয়ায় একদিকে যেমন স্বাস্থ্যসম্মত পান উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে, তেমনি বেড়েছে ফলন। এতে করে কুষ্টিয়ার পানের কদর এখন দেশের গন্ডি পার হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশে।
কুষ্টিয়ায় বাংলা পান, মিঠা পান, দেশি পান, ঝালি পান, সাচি পান, কর্পূরী পান, গ্যাচ পান, মাঘি পান, উজানি পান, নাতিয়াবাসুত পান, বরিশাল পান ও উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধে সক্ষম বারি পান-১, বারি পান-২ এবং বারি পান-৩ ছাড়াও বেশ কয়েক জাতের পান চাষ হয়। এরমধ্যে বাংলা পান ও মিঠা পান খুবই জনপ্রিয়।
বাংলা পান পাতা পঁচা, পাতা পোড়া ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধক্ষম হওয়ায় কৃষক এ পান চাষে বেশি ঝুঁকছেন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এ অঞ্চলের কৃষকের আধুনিক উপায়ে পানের বরজ সংরক্ষণ ও বরজে পান চাষে প্রশিক্ষিত করেছেন। সঠিক প্রক্রিয়ায় বালাইনাশক প্রক্রিয়া শিখিয়েছেন। এখন এ অঞ্চলের পান চাষিরা বিঘাপ্রতি ১ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ করছেন। কয়েক বছর আগেও যেখানে অধিক লাভের আশায় কৃষক তামাক চাষে নিয়োজিত ছিলেন, এখন তামাকের পরিবর্তে পান চাষে ঝুঁকছেন। কুষ্টিয়ার চাষিদের মধ্যে পান বিক্রি করে দ্রত স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন অনেকেই।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, কুষ্টিয়ার পানচাষিরা পান উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ বিষমুক্ত প্রযুক্তি জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে পানচাষিরা ভালো ফল পেতে শুরু করেছেন। আর্থিকভাবেও বেশ লাভবান হচ্ছেন। এ জৈব বালাইনাশক পদ্ধতিতে পান চাষ করে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যসম্মত পান উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে, তেমনি আগের তুলনায় পানের ফলনও বেড়েছে।
এ জৈব বালাইনাশক পদ্ধতির আওতায় হলুদ আঠালো ফাঁদ, তুঁতে, চুন ও পানির সংমিশ্রণ ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে। জৈব বালাইনাশক ট্রাইকোডার্মা ফিজি মাইট, পোকা দমনে ইয়েলো স্টিকি ট্যাপ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়। এ প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে এখন পানচাষিরা সম্পূর্ণ নিরাপদ পান উৎপাদন করছেন।।