রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে হিলির আলু

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে হিলির আলু

দিনাজপুর হাকিমপুর প্রতিনিধি
মোঃ ওয়াজ কুরনী

দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়নের মাধবপাড়া গ্রামের অস্থায়ী হিলি হাটের আলু যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হাটে চলে আলুর বেচা-বিক্রি। প্রতিদিন দেড়’শ থেকে দুই’শ শ্রমিক এই হাটে কাজ করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮০০ থেকে ৯০০ মণ আলু কেনা-বেচা হয় এখানে। আলুর ভালো দাম পাওয়ায় খুশি এখানকার ব্যবসায়ী ও চাষিরা। স্থানীয়রা বলছেন এখানে সকালের চেয়ে বিকেলে হাটে আলু বেচা-কেনা বেশি হয়ে থাকে।

বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার মাধবপাড়া গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের চারপাশে বসেছে বিশাল আলুর হাট। শুধু আলু মৌসুমকে কেন্দ্র করে ৪০ থেকে ৫০ দিন বসে এই হাট। হাটের আশপাশে পলি অঞ্চল হওয়ায় সেখানে ব্যাপক আলুর চাষ হয়। ফলে আলু চাষিরা মাধবপাড়া গ্রামের এই হাটে এসে কাঙ্খিত দামে নিজেদের উৎপাদিত এই খাদ্য পণ্যটি ঢাকা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা ও রংপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে দাম দর করে বিক্রি করতে পারেন।

স্থানীয় আড়ৎদার দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পাইকারদের সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনে দিচ্ছে এবং আড়ৎদাররা তাদের হিস্যা বুঝে নিচ্ছে। বর্তমানে এই হাটে রোমানা জাতের আলু প্রতি মণ ১১০০ টাকা থেকে ১১৪০ টাকা এবং ক্যারেজ আলু প্রতি মণ ৮০০ টাকা থেকে ৮৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি রোমানা আলু ২৭ থেকে ২৮ টাকা এবং ক্যারেজ আলু প্রতি কেজি ২০ থেকে ২১ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দিকে রোমানা আলু ১১৫০ টাকা থেকে ১১৮০ টাকা এবং ক্যারেজ আলু ৮৪০ থেকে ৮৬০ টাকা প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে।

চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলে হয়েছে আলুর বাম্পার ফলন। গতবার টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয় আলু চাষিদের। এবার আলুর ভালো ফলন ও আবহাওয়া ভালো থাকায় আগের ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা।

অস্থায়ী আলুর হাটে কথা হয় আলুচাষি রাজু মিয়ার সাথে তিনি বলেন, গতবারে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। ফলন ভালো হয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ টানা বৃষ্টি হওয়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। এবার পাঁচ বিঘা জমিতে রোমানা ও ক্যারেজ আলু চাষ করেছি। এবার ফলন যেমন ভালো হয়েছে তেমনি দাম অনেক ভালো। গতবারের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবো বলে আশা করছি। আজ রোমানা আলু ২৫ মণ বিক্রি করলাম ১১৪০ টাকা আর ক্যারেজ আলু ৮০০-৮২০ টাকা প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে।

আরেক আলু চাষি আনারুল ইসলাম বলেন, সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। আজ ক্যারেজ আলু হাটে নিয়ে আসছি। স্থানীয় আড়ৎদাররা ৮০০-৮২০ টাকা মণ পাইকারদের কিনে দিচ্ছে। আর আড়ৎদাররা তাদের কমিশন নিচ্ছে পাইকারদের কাছ থেকে।

স্থানীয় আড়ৎদার খোকন মিয়া বলেন, আমি এই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা। তাই এ অঞ্চলের কৃষকরা আমার এখানে আলু দিয়ে যায়। অনেক সময় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাইকারদের আলু কিনে দিচ্ছি। এতে আমার প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা কমিশন আসে এতে আমার খুব সুন্দর ভাবে চলে। আজ আমরা রোমানা আলু প্রতি মণ ১১৩০ থেকে ১১৪০ টাকা এবং ক্যারেজ আলু ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা মণ কিনছি।

কথা হয় নাটর বোনপাড়া থেকে আসা আলুর পাইকার নজরুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন রকমের আলু পাওয়া যায় শুনে অনেক দূর থেকে এসেছি। দুই দিন হচ্ছে আমি এখানে এসেছি। আলু কিনে ট্রাকে করে নাটোর বোনপাড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ বাজারে পাঠিয়ে দিচ্ছি। খরচ খরচ্ছা বাদ দিয়ে প্রতি কেজি আলুতে দুই থেকে আড়াই টাকা লাভ হয়। আজকে রোমানা ও ক্যারেজ আলুসহ ২০০ বস্তা আলু কিনেছি। রোমানা আলু ১১২০- ১১৪০ টাকা মণ এবং ক্যারেজ আলু ৮০০-৮২০ টাকা মণ কিনেছি।

হাটের ইজরাদার শাহাজামান মিয়া বলেন, প্রতি বছর আলুর মৌসুমে এখানে ৪০ থেকে ৫০ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অস্থায়ী আলুর হাট বসে। এখানকার আশপাশের অঞ্চল পলি মাটি হওয়ায় এই অঞ্চলে প্রচুর আলু চাষ হয়। এখনকার আলু কিনতে স্থানীয়সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা আসেন। আমরা তাদের ব্যবসায়ীক সার্বিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকি। এই হাটে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ মণ আলু ক্রয়-বিক্রয় হয়। মণপ্রতি ৬ থেকে ৭ খাজনা নিয়ে থাকি। গত বছরের তুলনায় এবারে ডাবল টাকা দিয়ে হাট ইজারা নিতে হয়েছে। গতবারে হাটের ডাক হয়েছিল চার লাখ টাকা আর এবার ডাক হয়েছে আট লাখ টাকা।

তিনি আরও বলেন, এখানে অস্থায়ী আলুর হাট বসায় প্রতিদিন প্রায় দেড়’শ থেকে দুই’শ স্থানীয় শ্রমিক এখানে কাজ করছে। বিনিময়ে প্রতিদিন তারা ৭০০-৮০০ টাকা মজুরি পাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *