শেরপুর ঝিনাইগাতীর ঐতিহাসিক কাটাখালি যুদ্ধ দিবস পালিত

শেরপুর ঝিনাইগাতীর ঐতিহাসিক কাটাখালি যুদ্ধ দিবস পালিত

আল-আমিন শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ ৬জুলাই

শেরপুরের ঝিনাইগাতীর ঐতিহাসিক কাঁটাখালী যুদ্ধদিবস। ১৯৭১সালের মুক্তিযোদ্ধে আজকের এই দিনে ‘অপারেশন কাটাখালি’ নামের ঐতিহাসিক কাটাখালী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ওই যুদ্ধে সম্মুখ সমরে শহীদ হন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃতি শিক্ষার্থী অপারেশন কমান্ডার নাজমূল আহসান এবং তাঁর পরিবারের অপর দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেন সহ ১২ জন।

দিবসটি পালন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে কাটাখালীতে শহীদ নাজমুলের স্মৃতিসৌধে শহীদের ম্যুরালে প্রথমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুক্তাদির আহমেদ, ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ফারুক আল মাসুদ। এরপর “আমরা আঠার বছর বয়স” শেরপুর সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। পরে “আমরা আঠার বছর বয়স” এর আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ এর সভাপতিত্বে ও “আমরা আঠার বছর” ঝিনাইগাতী উপজেলা শাখার সভাপতি তুষার আল নূর এর উপস্থাপনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুক্তাদির আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল শেরপুর জেলার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম হিরু, শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. রফিকুল ইসলাম আঁধার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হাকাম হিরা, মালিঝিকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক একেেম ছামেদুল হক প্রমুখ।

এসময় বিশিষ্ট সমাজ সেবক রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, “আমরা আঠার বছর” সংগঠনের জেলা সভাপতি শিক্ষাবিদ আবুল কালাম আজাদ, জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি মো.নমশের আলম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল আমীন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভা শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সঠিক উত্তরদাতাদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রদান করেন, অতিথিগণ।

উল্লেখ্য যে, শেরপুর-ঝিনাইগাতী- নালিতাবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে কাটাখালী ব্রিজটি পারি দিয়ে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার আহাম্মদ নগরে ছিল ১১ নং সেক্টরের বিপরীতে পাক আর্মির হেডকোয়ার্টার। তাই এটি ধ্বংস করে পাকবাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দিতে এই ব্রীজ ধ্বংস করা অপরিহার্য হয়ে উঠে। কিন্তু ইতিপূর্বে কয়েকটি অভিযান ব্যর্থ হয়।

অবশেষে ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে কোম্পানি কমান্ডার নাজমূলের নেতৃত্বে অপারেশন কাঁটাখালী সফল হয়। ডিনামাইট ফিট করে কাটাখালি ব্রিজটি উড়িয়ে দিতে সক্ষম হন তাঁরা। ফলশ্রুতিতে উল্লেখযোগ্য এলাকার যুদ্ধ পরিস্থিতি বদলে যায়।

সফল ওই অপারেশন শেষ করতে ভোর হয়ে যাওয়ায় পাশ্ববর্তী রাঙামাটি খাঠুয়াপাড়া গ্রামে আশ্রয় নেয় মুক্তিযোদ্ধারা‌। কিন্তু ঐ গ্রামের জালাল মিস্ত্রী পাক বাহিনীর স্থানীয় হেড কোয়ার্টার আহাম্মদনগর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবরটি পৌঁছে দেয়। সংবাদ পেয়ে পাক হানাদার বাহিনী ৬ জুলাই সকালে রাজাকার, আল-বদরদের সাথে নিয়ে রাঙ্গামাটি গ্রাম তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে শহীদ হন কমান্ডার নাজমুল আহসান, তার চাচাতো ভাই আলী হোসেন ও মোফাজ্জল হোসেন নামের তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

এরপর পাক বাহিনী রাঙ্গামাটি গ্রামে হানা দিয়ে ৬০/৭০ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন শহীদ হন। এছাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজন নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়।

স্বাধীনতা অর্জনের পর মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে শহীদ নাজমুলকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়েছে। শহীদ নাজমুলের নামে ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ে একটি হল, নালিতাবাড়ীতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কাঁটাখালী ব্রিজের পাশে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন শহীদ নাজমুল চত্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *