মূল্যায়ন আপনাদের হাতে

মূল্যায়ন আপনাদের হাতে

উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধির ১৩ বছরে পদার্পণ:

—————————————————————
আমার নির্বাচনী এলাকা লালমোহন-তজুমদ্দিনে দীর্ঘ ১ যুগ সময় পার করার কাজটি আমার কাছে মোটেই সহজসাধ্য ছিলো না। বন্ধুর এই পথটি অতিক্রম করতে আমাকে বহু শ্রম দিতে হয়েছে। সেখানে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আমার মৃত্যুর চরম ঝুঁকিতো ছিলোই। মেজর হাফিজের দীর্ঘ ২৩ বছরের অপশাসনে লালমোহন-তজুমদ্দিন উপজেলা দুটি ছিল একটা মৃত্যুপুরী। এই ভদ্রলোকের দু:শাসন জার্মানির হিটলারকেও হার মানিয়েছে। ২০১০ সালের ২৪ এপ্রিল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি উপনির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমার পথচলা শুরু। অন্ধকারে নিমজ্জিত একটি অঞ্চলকে শান্তির সুবাতাস দিয়ে ঢেলে সাজানোর কাজটা কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার করার মতোই! রীতা-রানী-শেফালীদের সম্ভ্রম হানী, দিনদুপুরে অন্ধ মালেকের চক্ষু উৎপাটন করা, আওয়ামী কর্মীদের গুলি করে মেরে ফেলা, বসতঘরসহ জমিজমা দখল করা, পাঠশালার মেয়েদের দিনদুপুরে তুলে নিয়ে যাওয়া, পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে যাওয়া, স্কুল-কলেজে সন্ত্রাস লেলিয়ে দিয়ে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ ধ্বংস করাসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীরা।
সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে আমি শুরু করি। দীর্ঘ এগারোটি বছর কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে আজকের লালমোহন-তজুমদ্দিন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিজের শরীরকে বিছানায় লাগাই নাই। নিজের আরাম কে বিসর্জন দিয়ে রানারের মতো ছুটছি সাধারণ মানুষের কল্যানে। মানুষের কল্যানে কাজ করতে গিয়ে কত শত বেলা উপোস ছিলাম সেটা আপনারাই ভাল জানেন। নিজের আরাম-আয়েশ-সুখকে কখনোই প্রাধান্য দেই নাই। আমি বিশ্বাস করি জনগনের সুখ-ই আমার সুখ। শরীরে প্রচন্ড জ্বর নিয়েও আপনাদের খেদমতে লিপ্ত ছিলাম। নিজের শরীরের কষ্ট কখনো মনকে বুঝতে দেই না। এভাবেই দীর্ঘ বছরগুলো আপনাদের সাথে কাটিয়ে দিয়েছি। তৎকালীন লালমোহন-তজুমদ্দিনে ভাল কোন পাকা রাস্তা ছিলো না। আজ উক্ত অঞ্চলে কাঁচা রাস্তা নেই বললেই চলে। একটি অঞ্চলের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো বিদ্যুৎ। আজ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত প্রতিটি ঘর। সর্বনাশা মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার কড়াল গ্রাসে প্রতিবছর আমার নির্বাচনী এলাকা লালমোহন-তজুমদ্দিনের শত শত একর ফসল জমি ও বসতঘর নদীর অতল গর্ভে হারিয়ে যেতো। সেখানে আমি হাজার কোটি টাকার উপরে বরাদ্দ এনে নদীভাঙ্গন রোদ করিয়েছি। মেঘনার জলদস্যুর কথা কমবেশি সবার জানা আছে। এদের অত্যাচারে মানুষ ঘর থেকে নদীতে মাছ ধরতে সাহস পেত না। যদিও সাহস করে যেতেন, তার ঘরে আসার নিশ্চয়তা ছিলো না। এহেন অবস্থায় জেলেদের সুবিধার্থে আমি স্পীডবোর্ড প্রদান করি। যেগুলো দিয়ে জেলেদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়।
চরজহির উদ্দিন ও চরমোজাম্মেল এর মত বিস্তীর্ণ ও দূর্গম এলাকার মানুষ এমপি কি জিনিস সেটাই চোখে দেখে নাই। আমি প্রতিবছর উক্ত দুটি এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের একান্তে কাছে গিয়ে তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করে দেই। উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে এই দুটি অঞ্চল আজ কোন অংশেই পিছিয়ে নেই। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি নতুন একাডেমিক ভবন করে দিয়েছি। লালমোহন উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, থানা ভবন কমপ্লেক্সে, মুক্তিযোদ্ধা ভবন কমপ্লেক্স, বড় বড় কয়েকটি ব্রীজ, নতুন ৩টি কলেজ ও ৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ আধুনিক একাডেমিক ভবন প্রদান, লালমোহন সরকারী হাসপাতাল কে ৫১ শয্যায় উন্নীতকরণ ও তজুমদ্দিন সরকারী হাসপাতালকে আধুনিক ভবনে রুপান্তর করেছি। তজুমদ্দিনের থানা ভবন কমপ্লেক্স, মুক্তিযোদ্ধা ভবন কমপ্লেক্স সহ সরকারী-বেসরকারী প্রতিটি স্থাপনা আজ দেখতে নয়াভিরাম দৃশ্যের মতো। এই প্রথম বাংলাদেশে আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্রের নামে “লালমোহন সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল পার্ক” তৈরী করেছি। সেখানে দুর-দুরান্ত থেকে দৈনিক হাজার হাজার লোক সেই পার্কে ঘুরতে আসে। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি এই পার্কটি উদ্বোধন কালে বলছিলেন, এখানে আসলেই মনে হয় যেন ইউরোপের কোন একটি এলাকায় এসেছি। তিল তিল করে গড়া লালমোহন ও তজুমদ্দিন আজ উন্নয়ন, শান্তি ও অগ্রগতির এক মাইলফলক। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে যেখানে মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস করে না সেখানে রেকর্ড দীর্ঘ তিনমাস একটানা নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে গৃহবন্ধি প্রতিটি পরিবারের মাঝে নিজ হাতে খাবার সব বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজীয় চাহিদা তুলে দিয়েছি। তাদের কখনো কষ্ট বুঝতে দেইনি। আমার ভালবাসার শেষ আশ্রয়স্থল, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি আমার জীবনের চরম মূল্য দিয়ে হলেও নির্বাচনী এলাকার যে কোন মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকব। বৃদ্ধ বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানদের রাজধানী ঢাকায় রেখে প্রতিটি ঈদে আপনাদের সাথে থেকে সুখ-দু:খ ভাগাভাগি করে নিয়েছি। আপনাদের সবার সাথে একত্রে বসে ঈদের কুশল বিনিময় শেষে খাবার খেয়েছি। প্রতিটি ঈদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাদের বাসায় গিয়ে তাদের খোঁজখবর নিয়েছি। যতটুকু সম্ভব তাদের আর্থিক সহযোগীতা করেছি। নিজস্ব অর্থায়নে অনেক নেতাদের পাকা বাড়ি করে দিয়েছি। অনেকের সন্তানদের সরকারী চাকুরীসহ স্কুল-কলেজে চাকুরীর ব্যবস্থা করেছি। আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ লালমোহন উপজেলা শাখার সভাপতি সর্বোপরি স্থানীয় সাংসদ হিসেবে এই প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাদের ভালোমন্দ দেখাশুনার দায়িত্ব আমার উপরই বর্তায়। নিজ খরচে অগনিত লোকদের আমি চিকিৎসা করিয়েছি। রাজধানীর নামকরা ইউনাইটেড হাসপাতালসহ ভারত-সিঙ্গাপুর নিয়েও আমি নেতাকর্মীদের চিকিৎসা করিয়েছি। সাধারণ কর্মীদের নিজ খরচে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা নিয়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়েছি। চিকিৎসা বা আর্থিক অনুদানের ক্ষেত্রে আমি কখনো দলকে প্রাধান্য দেইনি। সর্বশ্রেণীর লোক এই দুটি সুবিধা আমার কাছে পেত।
আজ পূর্বের ন্যায় কোথাও অনাচার-অবিচার হচ্ছে না। আমি শুরু থেকেই জানিয়ে দিয়েছি আমার নির্বাচনী এলাকা লালমোহন-তজুমদ্দিনে সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্য হতে পারে না। আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি অন্যায়কারী যেই হোক না কেন কোন ছাড় নয়। হোক সে আমার বংশের কেউ। অন্যায়-অত্যাচারীর বিরুদ্ধে আমি সবসময়ের জন্য জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। লালমোহন-তজুমদ্দিনের মানুষ আজ মহাখুশি। প্রতিটি সেক্টরে শান্তি ও সমৃদ্ধির সুবাতাস বইছে।
এই শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আমার একার অবদান নয়। সকল কিছুই দেশরত্ন, জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান। কারন, তিনি আমাকে সুযোগ দিয়েছেন বলেই আমি আপনাদের খেদমত করার সুযোগ পেয়েছি।
যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন লালমোহন ও তজুমদ্দিনবাসীর উন্নয়ন, শান্তি ও অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাব ইনসাল্লাহ।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *