আচরণ বিধি লঙ্ঘনই মোটরসাইকেল মার্কার প্রচারণার।

আচরণ বিধি লঙ্ঘনই মোটরসাইকেল মার্কার প্রচারণার।

স্টাফ রিপোর্টার ;

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এর দ্বিতীয় ধাপে আগামী (২১-মে) মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকেই প্রতিনিয়ত নানাভাবে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন মোটরসাইকেল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়া চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজি ও তার কর্মী-সমর্থকরা। এসব কারণে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনামও হয়েছেন তারা।

এতে করে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করাটাই তার নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া আরেক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এস এম আমিনুল ইসলাম (রতন)। তার দাবি, প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে বহুবার জানালেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি ইউএনও অফিসে আচরণ বিধি সংক্রান্ত এক সভায় মোটরসাইকেলের ত্রুটিযুক্ত পোস্টার অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হলেও তা করা হয়নি।

প্রচারণার শুরু থেকেই নানাভাবে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করতে থাকেন হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজি। প্রথম থেকেই ভোটারদের জন্য বিপুল পরিমাণে খিচুড়ির আয়োজন করে সভা-সমাবেশ করে চলেছেন তিনি। কিছুদিন পূর্বে তার পক্ষে এক সভায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বেপারি “ছাত্রলীগের উপরে কোন সন্ত্রাস নাই” এমন বক্তব্য দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছেন।

এর কয়েকদিন পরেই আবার ইদ্রিস ফরাজির পক্ষে এক সভায় কিছুদিন পূর্বে হয়ে যাওয়া বড়কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ওহাব মাদবর স্থানীয় এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কটুক্তি করে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান করলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যা নিয়ে এখনও ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে জাজিরা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের মধ্যে।

এছাড়াও ইদ্রিস ফরাজির প্রচারণায় ব্যবহৃত পোস্টারে নৌকার ব্যাচ সম্বলিত নিজের ছবি ব্যবহার করায় প্রতিপক্ষের আপত্তির প্রেক্ষিতে জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা সকল পোস্টার অপসারণ করার নির্দেশ দিলে তিনি তা অপসারণ করবেন বলে জানিয়েও পরবর্তীতে তা করেননি। অন্যদিকে জাজিরা ইউনিয়নের জব্বার আলী আকন কান্দি বাজারে তাদের ক্লাবের ব্যানারেও আচরণ বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে।

জাজিরা পৌর শহরের একটা অংশের প্রভাবশালী নেতা জাজিরা পৌরসভার সাবেক মেয়র অধ্যাপক আ: হক কবিরাজের সমর্থন নিয়ে তাদের নির্বাচনী ক্লাব জুড়ে লাগানো বিশাল আকারের একটি ব্যানারের মাঝের অংশে মোটরসাইকেল প্রতীক রেখে বাম পাশে প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির ছবি দেয়ার পাশাপাশি চরাঞ্চলের সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে প্রভাবশালী ওই গ্রাম্য নেতার ছবি বড়ো করে দেয়া হয়েছে ব্যানারের ডান পাশে।

প্রার্থী না হয়েও মোটরসাইকেল প্রতীক সম্বলিত ব্যানারে প্রার্থীর পাশাপাশি তার ছবি দেয়া নিয়ে জাজিরা পৌরসভার সাবেক মেয়র অধ্যাপক আ: হক কবিরাজের কাছে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পাশাপাশি তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও এই নিউজ লেখা পর্যন্ত তার কোন জবাব দেননি হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজিকে সমর্থন দেয়া স্থানীয় এই গ্রাম্য নেতা।

অন্যদিকে ইদ্রিস ফরাজির নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া তার আপন ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন ইমন ফরাজি,
গত বৃহস্পতিবার সরকারি জাজিরা মোহর আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে পোলিং-প্রিজাইডিংদের ট্রেনিং সেন্টারে প্রবেশ করে বেশ কিছুক্ষণ সময় সেখানে অবস্থান করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করার লক্ষ্যে পোলিং-প্রিজাইডিংদের সাথে সক্ষতা গড়ে তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টার পাশাপাশি নিয়ে গেছেন তাদের ফোন নম্বর। এসবের পাশাপাশি অবৈধ উপায়ে সাধারণ ভোটারদের প্রভাবিত করার অপচেষ্টা ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করারও অভিযোগ রয়েছে তার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, ইদ্রিস ফরাজি ও তার লোকজন বিভিন্ন এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে প্রতিপক্ষের মিটিং বা সমাবেশ বাঞ্চালের চেষ্টার পাশাপাশি সম্পদশালী হওয়ায় বিপুল পরিমাণে কালো টাকা ছড়িয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর জনপ্রতিনিধি ও প্রভাব বিস্তার করার মতো গ্রাম্য নেতাদের পক্ষে টেনে তাদের দিয়ে সাধারণ ভোটারদের হুমকি দেয়ার পাশাপাশি অবৈধ অর্থ প্রদানেরও চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিয়মিত।

নির্বাচনের শুরু থেকে এভাবেই নির্বাচনী নীতিমালা ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশ-নিষেধ উপেক্ষা করার মাধ্যমে প্রশাসনকে অনেকটা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেও অনেকটা নির্বিঘ্নে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া মোটরসাইকেল প্রতীকের এই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। আর প্রশাসনের দাবি তারা লিখিত অভিযোগ পেলে নিবে ব্যবস্থা।

এসব বিষয়ে জানতে হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রশ্ন শুনে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বিষয়গুলো নিয়ে আক্ষেপের সুরে ঘোড়া প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এস এম আমিনুল ইসলাম (রতন) বলেন, আমরা শুরু থেকেই আচরণ বিধির বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক থাকায় আমাদের উল্লেখযোগ্য কোন আচরণ বিধি লঙ্ঘন হয়নি। কিন্তু আমার প্রতিদ্বন্দ্বী এই প্রার্থী যেনো আচরণ বিধি লঙ্ঘন ছাড়া কিছুই করতে পারেন না। সময় স্বল্পতায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি। তবে, আমরা বহুবার মিডিয়ায় এগুলো বলার পাশাপাশি প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে জানালেও এখনও কোন প্রতিকার দেখিনি। আমরা ভোটারদের কাছেই যাবো নাকি অভিযোগ নিয়ে দৌড়াবো বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এবিষয়ে জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, কোনো প্রার্থী যদি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন, লিখিতভাবে তার সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *